সহায়ক সরকারের নিয়ে ইসির করার কিছু নেই: সিইসি

নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, সংসদ থাকবে কি থাকবে না- সেসব বিষয় এখতিয়ারের বাইরে থাকায় নির্বাচন কমিশনের করার কিছু নেই বলে জানিয়ে দিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2017, 01:52 PM
Updated : 26 Oct 2017, 06:51 PM

দীর্ঘ সংলাপে বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলো নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকারের’ উপরই গুরুত্ব দিয়েছিল। সেইসঙ্গে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমঝোতার কথাও বলেছিল তারা।

কিন্তু সংলাপ শেষে বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে দৃশ্যত বিএনপি ও তার মিত্রদের হতাশ করলেন সিইসি।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হওয়ার পর এখন নির্বাচিত সরকার এবং সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচনের বিধান।

তবে তাতে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ‘সহায়ক সরকারের’ দাবি তুলেছে। তবে এটি কেমন হবে, তা এখনও জানায়নি তারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, সংবিধান অনুসরণ করে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।    

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, “সংবিধান ও আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন করতে হবে। সাংবিধানিক বিষয় আমাদের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।”

এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগও ইসির নেই বলে মনে করেন সাংবিধানিক সংস্থাটির প্রধান নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, “সহায়ক সরকার, সংসদ ভেঙে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সরকারের উপর চাপ বা বাধ্য করার সুযোগ নেই।”

ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতারা

ইসির সংলাপে বিএনপি নেতারা

রোডম্যাপ নিয়ে সংলাপ করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমাতে কিংবা তাদের মধ্যে সমঝোতার কোনো  উদ্যোগ ইসি নেবে না বলে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে নূরুল হুদা বলেন, “না; এটা (সমঝোতা) আমরা নেব না। সমঝোতার কোনো উদ্যোগও নেব না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হওয়া ভালো।”

সংলাপে আসা নানা প্রস্তাব নিয়ে ইসির করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ইসির এখতিয়ারে মধ্যে থাকাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে এবং বাকিগুলো সরকার ও সংসদের কাছে পাঠানো হবে।

“গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেগুলো আমাদের করার আছে তা আমরা বাস্তবায়ন করব। আইন প্রণয়নের বিষয়ে সংসদের কাছে পাঠাব এবং সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করব।”

বিদ্যমান আইনেও সেনা মোতায়েনে কোনো বাধা না থাকলেও ভোটের সময়কার পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান সিইসি।

প্রায় তিন মাস ধারাবাহিক সংলাপের পর চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি।

‘নিয়ন্ত্রণ আছে, থাকবে’

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনের সব ক্ষমতা সংবিধান অনুসারে ইসির অধীনে থাকবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।

সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা

ইসির স্বল্প সংখ্যক নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে ভোট আয়োজন সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের ১০-১২ লাখ লোকবলকে মাঠে থাকতে হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হদা বলেন, “ভোটের সময় নিয়ন্ত্রণ আমাদের থাকে; ইসির নিয়ন্ত্রণ আছে ও থাকবে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য আইনের নতুন করেও পরিবর্তনের দরকার নেই; বিদ্যমান আইন প্রয়োগই যথেষ্ট। তা করতে পারলেই ভোটে শৃঙ্খলা থাকবে।”

ভোটে দায়িত্ব অবহেলা বা আইনের ব্যত্যয় ঘটলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন সিইসি।

‘চাপ নেই’

বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কোনো চাপ আসেনি বলে জানান সাবেক আমলা নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, “সরকারের কোনো মন্ত্রী, এমপি বা কারও কাছ থেকে আমাদের কাছে চাপ আসেনি। আগামীতে কখনও এলে তাও প্রত্যাখ্যান করব।”

বিএনপির আশায়

সংলাপ শেষ করে অংশীজনের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন বলে দাবি করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “এ সংলাপ সফল হয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে সবাই তা মূল্যায়ন করবে। আমরা তো মনে হয়, এতে আস্থা বেড়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “বিএনপিসহ সব দল আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে আশা করি।”

সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা

 

১৫ অক্টোবর সংলাপে জিয়াউর রহমানের গুণগান করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে পড়েন নূরুল হুদা। এ ধারাবাহিকতায় সংলাপ বর্জন ও সিইসির পদত্যাগ দাবি করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

বৃহস্পতিবার ওই প্রসঙ্গ তুললে নূরুল হুদা বলেন, “জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। হ্যাঁ, আমি এটা এখনও ওন করি। এটা তো তথ্যভিত্তিক বলেছি।”

“জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠাতা না, তাকে বলেছি পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা। মানে হল- আগে বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল, তা আবার ফিরে আসছে। এর মাধ্যমে বহুদলীয় নির্বাচন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগসহ সকল দল নির্বাচনে অংশ নেয়। বহুদল সংসদ পরিচালনা করেছিল।

“আমি ওন করি জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জিয়াউর রহমান যখন নতুন দল প্রতিষ্ঠা করে সম্ভবত ১৯৭৭ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর। তখনকার আগে দেশে গণতন্ত্র ছিল না। ৭৫ পর থেকে ওই সময় পর্যন্ত গণতন্ত্র ছিল না।”

“আমি কাউকে খুশি করার জন্য এটা বলিনি, তথ্যভিত্তিক বলেছি,” বলেন নূরুল হুদা।

প্রতিবেদন ডিসেম্বরে

১৬ জুলাই একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত রোডম্যাপ মেনে অক্টোবরের মধ্যে ৪০টি রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শেষ করতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সিইসি।

তিনি জানান, চার শতাধিক সুপারিশসহ অভিন্ন অনেক প্রস্তাব নিয়ে সংকলনের কাজ শুরু হচ্ছে। সাংবিধানিক, আইন প্রণয়ন ও ইসির করণীয়- এ তিন ভাগে এসব প্রস্তাবকে বাছাই করা হচ্ছে।

“নভেম্বরের মধ্যে সংলাপে পাওয়া সুপারিশ সংকলন করে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বই আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হবে আশা করি,” বলেন নূরুল হুদা।

আর সংলাপ নয়

১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মাথায় একাদশ সংসদ নিয়ে সংলাপ আয়োজন করলেও ভোটের আগে আর কোনো সংলাপ না করার ইঙ্গিত দেন সিইসি।

২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

সিইসি বলেন, “এই তো সংলাপ শেষ করলাম। আপাতত আর সংলাপ আমরা করব না।”