মিয়ানমারের পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার বাংলাদেশ: আমীর খসরু

রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী নির্মূল করতে মিয়ানমার সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে মন্তব্য করে একে এক ধরনের আক্রমণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2017, 10:19 AM
Updated : 21 Oct 2017, 11:43 AM

এবার রোহিঙ্গা সঙ্কটের শুরু থেকেই সরকার যথাযথ কূটনীতিক অবস্থান না নিয়ে ‘সমস্যাকে দুর্বল করে’ দিয়ে সমাধানকে কঠিন পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলেও ভাষ্য তার।

শনিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু বলেন, “যে দেশ (মিয়ানমার) তাদের দেশের একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিধন করতে বাংলাদেশকে টার্গেট করে রোহিঙ্গাদের পাঠিয়েছে, তারা খুব ভালো করে জানে- এরা কেউ ভারতে যেতে পারবে না, থাইল্যান্ডে যেতে পারবে না, এরা কেউ চীনের যেতে পারবে না।

“যেখানে আমার দেশ মিয়ানমারের পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার, সেই দেশ যখন পরিকল্পনাকারী দেশের সাথে এক সুরে গান গায়, এক সুরে কথা বলে সেখানেই তো আমাদের অবস্থান শেষ হয়েছে গেছে।”

রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর পাল্টা সেনা অভিযানে গত ২৫ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশমুখে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। প্রথমদিকে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও এর মধ্যে পালিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে গেলে কয়েকদিনের মধ্যেই সীমান্ত খুলে দেয় সরকার।

একইসঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মিয়ানমারকে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালানোর আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ।

শুরু থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ‍সরকার দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেনি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু।

তিনি বলেন, “যদি প্রথম দিন থেকে আপনার (সরকার) অবস্থান মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতেন, কূটনৈতিক অবস্থান নিতেন এবং সাথে সাথে আপনি মানবিক অবস্থান নিতেন তাহলে বিশ্বের সামনে আমাদের অবস্থান ভিন্ন হতে পারত।

“বাংলাদেশের জনগণ এই ইস্যুতে একতাবদ্ধ ছিল। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি, এখানে কোনো রাজনীতি নয়, আমাদের সবাই একতাবদ্ধ হতে হবে।”

রোহিঙ্গা সঙ্কটে সরকার ‘বন্ধুহীন’ মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, “আমরা দেখেছি, এই অঞ্চলে যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপার ছিল সেখানে আমাদের কোনো বন্ধুই নাই। যারা আমাদের বন্ধু বলেছিল এতদিন, এই সরকার প্রচারণা করেছিল... তারাও কেউ পাশে আসেনি। বরঞ্চ এরা সবাই মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। আমরা একটা বন্ধুহীন অবস্থায় একদিকে।

(ফাইল ছবি)

“অন্যদিকে নিজেকে আমরা দুর্বল অবস্থায় নিয়ে গেছি। আমরা ইস্যুটাকে ডায়লুট করে ফেলেছি, যে ইস্যুটা ছিল পরিষ্কার, স্বচ্ছ; যার কারণে আজকে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান একটা কঠিন পর্যায় চলে গেছে।”

১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বিএনপি ‘সফল’ হয়েছিল মন্তব্য করে বর্তমান সরকার ভ্রান্ত পথে চলেছে বলে ভাষ্য তার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “এই (রোহিঙ্গা) সমস্যা সমাধান করার জন্য আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। দুই-দুই বার এই সমস্যা বিএনপি সমাধান করেছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।

“কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো সহযোগিতা নেবে না। কারণ সমস্যার মূল যেখানে, সেখানেই তারা এটা শেষ করে দিয়েছে। যেখানে সমাধানের মূল ছিল, তারা সেখানে ভ্রান্ত পথে চলেছে।”

আগে থেকে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এবার ইতোমধ্যে পৌনে ছয় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। দমন-পীড়নের মুখে এখনও প্রতিদিন অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

রাখাইনে মিয়ানমার সরকার গণহত্যা করছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, “মিয়ানমার জাতি নিধন, গণহত্যার মতো কাজ করছে। এই কাজটি করার জন্য তারা একতাবদ্ধ।

“অং সান সু চি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, এটা উনি ভুলে গেছেন। রোহিঙ্গার ব্যাপারে সূচির সরকার, মিয়ানমার সেনাবাহিনী একতাবদ্ধভাবে কাজ করছে।”

মিয়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া এই সমস্যার সমাধানে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে দেশে ‘জাতীয় ঐক্যের’ প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য এই বিএনপি নেতার।

আমীর খসরু বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত ভালো ভালো কথা শুনবেন। কিন্তু আজকে রোহিঙ্গা ইস্যু যে জায়গা গিয়ে পৌঁছেছে, সেখান থেকে ফেরত নিতে হলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা আছে।

“নির্বাচিত সরকার, প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রয়োজন আছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রয়োজন আছে, আইনের শাসনের প্রয়োজন আছে। তাহলেই বিশ্বব্যাপী আপনার (সরকার) অবস্থান অনেক শক্তিশালী হবে। আপনার অবস্থান শক্তিশালী হলে কূটনৈতিক অবস্থানও শক্তিশালী হবে।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক আইনে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা, সমাধান ও করণীয়’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।

সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক এসএম হাসান তালুকদার।

জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহহিল মাসুদের পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান এবং অধ্যাপক ফিরোজা বেগম বক্তব্য রাখেন।