আ. লীগের প্রস্তাবে জনমত পাল্টে দেওয়ার কৌশল দেখছেন রিজভী

নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া আওয়ামী লীগের ১১ দফা প্রস্তাব ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়’ বলে মনে করে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2017, 11:03 AM
Updated : 20 Oct 2017, 03:19 PM

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ যে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে, তা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। কীভাবে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিভাবে ভোটের ফল পাল্টে দেওয়া যায়- সেই কৌশলই ওই সব প্রস্তাবনায় আছে, যা সম্পূর্ণরূপে জনমতের বিপরীত।

“আমরা মনে করি, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধান বাধা। জনগণের দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। এর বিরোধিতা করে ক্ষমতাসীন দল আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণের কাছে কোনো শুভ বার্তা দেয়নি।”

গত ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ১১ দফা প্রস্তাব দেয়। এতে দলটি একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালু, সংসদীয় আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিরোধিতার পাশাপাশি ভোটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‘১৮৯৮ সালের ফৌজধারী কার্যবিধি অনুযায়ী’ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব রাখে।

আওয়ামী লীগ এসব প্রস্তাবকে ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখলেও নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

কমিশনের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তাদের প্রস্তাব দিয়েছে সেটা তাদের বিষয়। এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব অবাধ, সুষ্ঠু , স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। কারণ নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তার নিরপেক্ষ কাজ করতে কোনো বাধা নেই।

“আমরা দৃঢ়তার সাথে বলে দিতে চাই, জনগণের দাবিকে অগ্রাহ্য করে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের আয়োজন চালালে তা হবে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা; দেশে অন্ধকার নেমে আসবে। জনগণ চায় নির্বাচন কমিশন যেন আওয়ামী লীগের আয়ত্বশাসনের মধ্যে বন্দি হয়ে না পড়ে।”

ভোটে ইভিএমের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ আওয়ামী লীগ ইভিএম রাখতে চায়। কারণ এটাতে দূর থেকে ফলাফল ম্যানিপ্যুলেট করা যায়। ক্ষমতাসীনদের যে ম্যানিপ্যুলেশনের একটা অশুভ উদ্দেশ্য আছে- সেজন্য তারা ইভিএম রাখতে চায়।

“অথচ নির্বাচন কমিশনের সাথে যত রাজনৈতিক দলের সংলাপ হয়েছে, অধিকাংশ দলই বলেছেন যে ইভিএম-ডিভিএম করা যাবে না। এটা নিয়ে অনেক উন্নত দেশেই বির্তক হয়েছে, আদালতে মামলা আছে। এমনকি ভারতেও কয়েকটি জায়গায় চালু করা হয়েছিল, সেখানেও তা বন্ধ করা হয়েছে।”

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ চায় সেনাবাহিনী ঠুটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকুক। মানে উপজেলা হেড কোয়ার্টারে বসে থাকল, গাড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরল। এদিকে সন্ত্রাসীরা ব্যালট বাক্স ভর্তি করে নিয়ে চলে গেল।

“কারণ তারা সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে চায় না। সেনা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা না দিলে ভোট সন্ত্রাস রোধ করা যাবে না।”

গত ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবর্ধনায় ব্যাপক লোক সমাগমে নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান রিজভী।

একসঙ্গে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সঠিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

চেয়ারপারসনের দেশে ফেরার দিন ও তার পরদিন আদালতে যাওয়ার সময়ে ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএ জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।