বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন তিনি।
তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে বিমানবন্দর সড়কে দেখা দেয় যানজট।
নেতা-কর্মীদের ভিড় ডিঙিয়ে গুলশানের বাসায় ফিরতে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের।
গত ১৫ জুলাই লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কোরবানির ঈদ করেন তিনি।
তার ফেরা নিয়ে সন্দেহের কথাও বলছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা; যদিও বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যকে অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়ে আসছেন।
খালেদা জিয়া বিদেশে থাকার মধ্যেই নাশকতা ও মানহানির তিন মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে; যার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের দাবি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ একদিন আগেই জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, বৃহস্পতিবার আদালতে গিয়ে জামিনও নেবেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুলও বুধবার একই কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি, তিনি কাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে যাবেন।”
খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার পর গাড়িতে করে সরাসরি গুলশানে তার বাড়ির পথে রওনা হন। তার সঙ্গে ছিলেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার।
রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় যখন খালেদা জিয়া পৌঁছান, তখন সেখানে ছিলেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ, জেবা খান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা উড়োজাহাজ থেকে নামার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ তাকে শুভেচ্ছা জানান তার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভিআইপি লাউঞ্জে পুলিশ জ্যেষ্ঠ অন্য নেতাদের ঢুকতে না দেওয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছে সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গাড়িতে থাকা খালেদাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম প্রমুখ।
বিমানবন্দর থেকে বনানী কাকলী পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে দলীয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এইসব স্থানে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, সিলেটের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম তাদের সমর্থকদের নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়ান। তাদের হাতের ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিহিত করা হয়।
এদিকে খালেদা জিয়ার ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল পুলিশ। বিমান বন্দরের ভেতরে আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য ছিল, বাইরেও মোতায়েন ছিল পুলিশ সদস্য। বিমানবন্দরে সামনে দুটি জলকামান, প্রিজন ভ্যানও ছিল।
বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত সড়কের বাতিগুলো বন্ধ থাকায় নেতা-কর্মীরা তাদের মোবাইল ফোনের বাতি জ্বালিয়ে তাদের নেত্রীর গাড়িবহরকে পথ নির্দেশনা দেন।
খালেদা জিয়া পুরোটা পথ গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
মওদুদ ও মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সড়কের পাশে দাঁড়াতে বাধা দিয়েছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, “তারপরও ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জনগণ দেশনেত্রীর আগমনে শুভেচ্ছা জানাতে প্রস্তুত।”
মহাসচিব ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে বিমানবন্দরের বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে তাদের প্রাণের অন্তঃস্থল থেকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। এই সংবর্ধনা নজিরবিহীন। এই সংবর্ধনায় প্রমাণিত হয়েছে ,দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় নেতা।”