রোববারের এই সংলাপে অর্থপূর্ণ কোনো ফল না এলেও ‘দমন-পীড়নের’ মুখে থাকা বিএনপির মহাসচিব একে দেখছেন আশার যাত্রা হিসেবে।
এদিকে ২০০৮ সালের পর এটিএম শামসুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসির কোনো ডাকে সাড়া না দেওয়া বিএনপির এই সংলাপে অংশগ্রহণকে রাজনীতিতে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো বিবেচনার আশ্বাস বিএনপি নেতাদের দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
কে এম নূরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি এসেছে তা পর্যালোচনার কথা বলেছি। আমরা যেসব দাবি পূরণ করতে পারব, আমাদের পক্ষে সম্ভব তা দেখব বলেছি।
“তবে যেসব দাবি ইসির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হবে না, সেসব বিষয় করতে পারব না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তাদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সিইসি হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’সহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে তার সরকারের নেওয়া উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তার এই বক্তব্যের প্রশংসা করে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান বলছেন, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে কথা বলেছেন সিইসি।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি নূরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকদিন পর বিএনপি সংলাপে এল। শুধু আমরা নই, জাতিও অধীর আগ্রহে ছিল। সফলভাবে সংলাপ হয়েছে আমাদের। উনারাও ইতিবাচক কথা বলেছেন, নেগেটিভ কিছু বা কোনো বিতর্কিত কথা বলেননি, অভিযোগও আনেননি। এ সংলাপ করে আমরা অত্যন্ত খুশি।”
বিএনপি ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ‘প্রশংসার’ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এই সচিব বলেন, “এটা প্রশংসা বলা যাবে না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যখন সংলাপে আসে সে সময়কার কিছু বিষয় উল্লেখ করে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছি। বিএনপি যখন এসেছে সেখানে সত্যি বিষয়, ঐতিহাসিক ধাপগুলো বলেছি।”
এই সংলাপ বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের দিকে কিছুটা অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “আমরা অত্যন্ত আন্তরিক, সহযোগিতা করছি। বিএনপিও সহযোগিতা করছে। আমরা আশাবাদী-বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।”
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম।
ইসির এই সংলাপ সফলতা আনবে বলে আশাবাদী এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক।
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত সংলাপ অত্যন্ত সফল। দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে আসতে পারছে বর্তমান ইসি। এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধোনের দ্বার খুলছে। আশা করি, সব দল ইসিকে সহযোগিতা করবে, কমিশনও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবে।”
সংলাপ সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, “ইসির সংলাপের ইতিহাসে বিএনপি-ইসি সংলাপ সবচেয়ে সফলতম। গত ১০ বছরে বিএনপির মূলধারা কমিশনের ডাকে সাড়া দেয়নি। এবারের মতো উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিও কখনও আসেনি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা তো আগে কখনও ইসির সংলাপে যাইনি। রকিব কমিশন তো কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন নিয়ে আর কী বলব! নতুন কমিশন আমাদের ডেকেছে, আমরা সাড়া দিয়েছি।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ইসির সংলাপে সংস্কারপন্থি মেজর হাফিজকে আমন্ত্রণ জানায়। পরবর্তীতে দুই পক্ষকে আমন্ত্রণ জানালেও নবম সংসদের আগে বিএনপির মূলধারার মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদফা কমিশনে এসেছিল বিএনপি।
২০০৮ সালের পরে বিএনপি শামসুল হুদা ও কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে আর বসেনি। কাজী রকিব কমিশনকে ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ বলে সমালোচনা করে দলটি।