সংসদ ভেঙে ‘সহায়ক সরকার’র অধীনে ভোট: ইসিতে বিএনপির প্রস্তাব

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে ‘সহায়ক সরকার’ এর অধীনে ভোটের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2017, 11:22 AM
Updated : 15 Oct 2017, 11:22 AM

ভোটের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের  আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইভিএম চালু না করার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।

জরুরি অবস্থার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলীয় চেয়ারপারসনসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকরা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিও রয়েছে বিএনপির ২০টি সুপারিশে।

পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে দায়িত্বে আসা কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও রোববার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি।

আড়াই ঘণ্টার সংলাপের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি বিশ্বাস করতে চায়, নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপ বা রোডম্যাপ বা পথ নকশা নিছক কালক্ষেপণ বা লোক দেখানো কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে না। এই সংলাপ যেন প্রহসনে পরিণত না হয়, তা কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে।”

সিইসি পদে শপথ নেওয়ার পর থেকে বিএনপির প্রশ্নের মুখে থাকা সাবেক আমলা নূরুল হুদা সংলাপে জিয়াউর রহমানের প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমনি খালেদা জিয়ার সরকারকে ‘প্রকৃত নতুন ধারার’ প্রবর্তক বলেও অভিহিত করেছেন।

সংলাপে সন্তুষ্ট হয়েছেন কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের যে একটা প্রচণ্ড রকমের অগণতান্ত্রিক আচরণ, সেখানে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে বলে তো আমরা মনে করি না।”

এর মধ্যেও আশার যাত্রাটা শুরু হল বলে মনে করেন কি না- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বলেন, “কিছুটা তো বটেই, আমরা কিছুটা আশাবাদী তো বটেই।”

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে থাকার মধ্যে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে মহাসচিব ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফিরে আসার ইঙ্গিত না দেখে ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ দাবি তুলেছে। এর রূপরেখা ‘শিগগিরই’ প্রকাশের পর তা ইসিকে দেওয়া হবে বলে বিএনপি জানিয়েছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, বর্তমান সংবিধান অনুসরণ করে নির্বাচিত অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নির্বাচন হবে। আর সংসদও বহাল থাকবে।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়ে ফখরুল বলেন, “নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

“বর্তমান অকার্যকর ও অপরিপক্ক সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এখন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে।”

বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইসির পক্ষ থেকে সংবিধানের বাইরে গিয়ে তাদের কিছু করার ক্ষেত্রে অক্ষমতার কথা জানানো হচ্ছে। তবে সিইসি বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আসা সুপারিশের যেগুলোর বাস্তবায়ন তাদের আওতার বাইরে রয়েছে, সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরবেন তারা।

ফখরুল বলেন, “আমরা আমাদের প্রস্তাবসমূহ দিয়েছি। তারা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে শুনেছেন। তারা বলেছে ন, আপনাদের (বিএনপি) প্রস্তাবগুলো আমাদের কাছে অত্যন্ত উপযোগী হয়েছে, সুচিন্তিত হয়েছে, আমরা উপকৃত হব। “তারা বলেছেন, তারা চেষ্টা করবেন ভবিষ্যতে যাতে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন।”

তবে সংলাপে ইসির সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও বিএনপির অনুধাবনে এসেছে।

ফখরুল বলেন, “তারা (ইসি) বলেছেন, তারা অনেকখানি সীমাবদ্ধ আছেন। একথা তারা স্বীকার করেছেন যে, দেশে বর্তমানে সেই অবস্থা নেই যে তাদের দায়িত্ব পুরো পালন করতে পারেন। এটাও বলেছেন যে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, গণতন্ত্রের যে আসল রূপ সেই রূপ বাংলাদেশে নেই।”

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে ইসির বক্তব্য কী ছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা বলেছেন, তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারা চেষ্টা করবেন, নিজেরা বসবেন, বসে দেখবেন কী করতে  পারেন।”

আগে ইসি বলেছিল রাজনৈতিক দলের সংলাপে মধ্যস্থতার ভূমিকায় যাবে না।

ফখরুল বলেন, “আজকে তারা একথা বলেননি। তারা বলেছেন, যে তারা নিজেরা বসবেন, আলাপ করে দেখবেন। তাদের কী কী সুযোগ আছে, সেই সুযোগ তারা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।”

সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন ফখরুল।

বিএনপি প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এএসএম আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুর রশীদ সরকার ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপিকে নিয়ে এই পর্যন্ত ৩৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ করল ইসি। আগামী ১৮ অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হবে।