বিচারপতি সিনহা সত্য বলে গেছেন: বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিবৃতিতেই প্রমাণিত হয়েছে সরকার বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2017, 12:57 PM
Updated : 14 Oct 2017, 01:50 PM

প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাওয়ার পরদিন শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছেন, সরকার এখন সর্বোচ্চ আদালতের ওপরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, বলেই দিয়েছেন। এখানে আমাদের নতুন করে কিচ্ছুই বলার নেই।”

শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিচারপতি সিনহার বক্তব্য বিএনপির কথাকেই সত্য প্রমাণিত করেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “তাকে যখন ছুটি চাওয়ানো হয় তখন বলা হয়েছিল, অসুস্থ আছে। তিনি বলেছেন, তিনি সুস্থ আছেন। অথচ সরকার সব সময় বলেছে, তিনি অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন।”

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা বিচারপতি সিনহা শুক্রবার রাতে বিদেশে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, তিনি অসুস্থ নন, বিচার বিভাগ যাতে কলুষিত না হয় সেজন্য ‘সাময়িকভাবে’ বিদেশে যাচ্ছেন।

ওই রায়ের সমালোচনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত।”

প্রধান বিচারপতি উচ্চ আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের আশঙ্কার কথাও বলেছেন। রাষ্ট্রের জন্য তা ‘কল্যাণ বয়ে আনবে না’ বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

শুক্রবার রাতে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে হেয়ার রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা

তার ওই বিবৃতি বিচার বিভাগ নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা ফখরুল।

তিনি বলেন, “দিজ স্টেটমেন্ট হ্যাজ স্টেটস দ্য ফ্যাক্টস। সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। সত্য কথাগুলো বলার পরে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, এই গভর্নমেন্টের ইনটেনশনটা কী, গভর্নমেন্ট কী করতে চাচ্ছে?

“যে কোনো বুদ্ধিমান লোক যারা এটা (প্রধান বিচারপতির বিবৃতি) পড়বেন তারা বুঝে যাবেন, কোন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতিকে চলে যেতে হয়েছে এবং কী ঘটতে চলেছে।”

তার রায় নিয়ে সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে বলে প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে ভুল বুঝানো হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিমান করেছেন’। আামি এই জিনিসটাকে সিরিয়াসলি দেখেছি। সরকারকে ভুল বুঝানো হচ্ছে, কে করছে? কারা করছে? কারা সেদিন তাকে (প্রধান বিচারপতি) বাধ্য করল অফিস ছেড়ে চলে যেতে, যেখানে তার জয়েন করার কথা। কারা বাধ্য করল, কারা ফলস একটা ডকুমেন্ট তৈরি করল?”

প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞ্চার সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যকে বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করেন ফখরুল। 

তিনি বলেন, “কয়েক ঘণ্টার বৈঠক থেকে বেরিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিচার বিভাগ কীভাবে চলবে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ-এসব ব্যাপারে আমরা আলাপ করেছি। এটা ডাইরেক্ট ইন্টারভেনশন ইন জুডিশিয়ারি।”

সম্প্রতি তিনটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পেছনেও সরকারের প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ ফখরুলের।

তিনি বলেন, “আইন বলছে, উচ্চ আদালতে কোনো মামলা পেন্ডিং থাকলে নিম্ন আদালতে ওই মামলার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। কিন্তু ওই ঘটনার (প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া) পর দেখা যাচ্ছে, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিতে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তারা দ্রুত ওই সব মিথ্যা মামলার নিষ্পত্তি করতে চায় এবং প্রধান বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেত্রীকে সাজা দিতে চায়।”

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ‘দেউলিয়া হয়ে গেছে’ বলেই বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা দেশপ্রেমিক, যারা শাসনতন্ত্র নিয়ে কাজ করতে চায়, যারা মুক্ত রাজনীতি চর্চা করতে চায় তাদের এটা দায়িত্ব রাষ্ট্রকে রক্ষা করা, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে জুডিশিয়ারিকে রক্ষা করা, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের মানুষের অধিকারকে রক্ষা করা।

“তাই সকল সচেতন মানুষ, দেশপ্রেমিক শক্তি, সকল পেশাজীবীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, টু কাম ফরওয়ার্ড অ্যান্ড সেইভ দ্য সিচুয়েশন।”

এ সময় ফখরুলের সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মুনির হোসেন, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম রাসেল সাইফুল ইসলাম পটু উপস্থিত ছিলেন।