ইসিতে বিএনপির প্রস্তাব হবে মাইলফলক: ফখরুল

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে বিএনপি একটি ‘সামগ্রিক প্রস্তাবনা’ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2017, 09:04 AM
Updated : 13 Oct 2017, 10:11 AM

শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা বড় টিম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাব; সেখানে গিয়ে লিখিতভাবে আমাদের সমস্ত প্রস্তাব তাদের সামনে তুলব। ইট উইল বি এ ভেরি কমপ্রিহেনসিভ। আমি মনে করি যে, এটা (প্রস্তাবনা) একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।

“আমরা সংসদ বিলুপ্তির কথা সুস্পষ্টভাবে বলব, সেনাবাহিনী নিয়োগের কথা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলব। নির্বাচনকালীন সময়ে যখন তফসিল ঘোষণা হবে, তখন প্রশাসনকে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে সে বিষয়েও বলব। আরপিওর কোথায় সমস্যা আছে সেটা বলব, এবং ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম চালু করা উচিত, অবজারভারদের (পর্যবেক্ষক) ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম থাকা উচিত- ডিটেলস আমাদের প্রস্তাবনায় থাকবে।”

সকালে শান্তিনগরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অসুস্থ তরিকুল ইসলামের বাসায় তাকে দেখতে ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে যান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

বর্তমান সরকার ক্ষতায় থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে ‘কিছুটা হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন’ সম্ভব মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “বিশেষ করে সরকার প্রধানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের কথা বলেছি যে, এটা এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, এখানে একটা পরিবর্তন আসা দরকার।

“তারা (ক্ষমতাসীনরা) সংবিধানে যেসব সংশোধনী করেছে, সেই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে- সেটাও কিন্তু প্রশ্ন থেকেছে সংশোধনীর মধ্যেই। যেমন পার্লামেন্ট ডিজলবড (বিলুপ্ত) হবে না। পার্লামেন্ট ডিজলবড না করলে কীভাবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে? আমাদের এখানে একটা ট্র্যাডিশন হয়ে আসছে, মানুষের মধ্যে একটা সাইকি তৈরি হয়েছে যে, সেনাবাহিনী নিয়োগ না করলে নির্বাচনে সুষ্ঠু অবস্থা আশা করা যায় না। এই বিষয়গুলো আমরা বলেই আসছি, সংলাপেও বলব।”

একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে পরামর্শ পেতে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ অগাস্ট থেকে শুরু হয় নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ।

এবার দলগুলোকে নিবন্ধনক্রমের নিচ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে হিসাবে বিএনপির জন্য ১২ অক্টোবর ও আওয়ামী লীগের জন্য ১৫ অক্টোবর সংলাপের তারিখ প্রস্তাব করা হয়।

কিন্তু বিএনপি দলীয় কর্মসূচির কথা বলে ১৫ অক্টোবর বসতে চাইলে তাদের জন্য সেই দিনই ঠিক হয়। আর আওয়ামী লীগের অনুরোধে তাদের সংলাপের জন্য ১৮ অক্টোবর তারিখ রাখা হয়।

এ কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে আসা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এই সংলাপকে বলেছিলেন ‘আইওয়াশ’।

সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ ও নানা নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি স্পেকুলেট করতে পারি কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমাকে তো আশাবাদী হতে হবে, আমাকে তো পথ বের করতে হবে। পথ বের বের করার জন্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি- শেষ পর্য্ন্ত চেষ্টা করে যাব, যেন আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারি, যেন সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হয়।”

সহায়ক সরকারের রূপরেখার প্রস্তাবনা কী নির্বাচন কমিশন দেবেন কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব না। আমরা তাদেরকে ধারণাটা দেব। দি পারসেপশন উইল বি গিবেন এবং আমরা এটা বলব যে, এটা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। রূপরেখাটা আমরা পরে দেব।”

সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আসতে চায়না বলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বলে ভাষ্য বিএনপি মহাসচিবের।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সরকার জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ মির্জা ফখরুলের।

তিনি বলেন, “এটা গোটা জাতির কাছে পরিষ্কার যে প্রধান বিচারপতিকে তারা জোর করেই বিদেশে পাঠানোর সমস্ত ব্যবস্থা করছে। সকলের কাছে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট সরকার চেষ্টা করছে পুরোপুরিভাবে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়া... নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ও চেয়ারপারসনের ‍প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল শান্তিনগরের ‘ইস্টার্ন পয়েন্ট অ্যাপার্টমেন্ট’ অসুস্থ তরিকুল ইসলামের বাসায় তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেওয়ার সময় তরিকুলের স্ত্রী নার্গিস বেগম ও ছেলে অনিন্দ্র ইসলাম অমিত উপস্থিত ছিলেন।

পরে অসুস্থ তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের মানুষ একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এখন আমরাসহ সমস্ত রাজনৈতিক দলই এটা দেখতে চাই। এমনকি গতকাল সিপিবি বলেছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, একই কথা অন্যান্য দলও বলছে।

“এখন বিষয়টা নির্ভর করছে সরকার এটা কিভাবে নেবে তার ওপর। আমরা চাই দেশের একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

নির্বাচন কমিশনের সংলাপ চলাকালে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেন তরিকুল।