বিদেশি চাপে নত হবেন না: ইসিকে মেনন

বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় মন্তব্য করে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2017, 11:54 AM
Updated : 11 Oct 2017, 11:54 AM

বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়ে কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করতে নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

সেই সঙ্গে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার এবং ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করাসহ ১৪টি প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

বুধবার দুপুরে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন এলেই বিদেশি দূতাবাস-সাহায্য সংস্থা ঝাঁপ দিয়ে পড়েন নির্বাচন নিয়ে। আমরা মনে করি, আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য না। ইসি যেন কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে।”

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। সংবিধানেই রয়েছে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবে। আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল বলে সংসদ ভেঙে দিতে হত। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকার দৈনন্দিন কার্যাবলী ছাড়া নীতিগত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না।”

সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

“নির্বাচন পরিচালনায় জড়িতরা এ সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। দায়িত্বে অবহেলায় ইসি তাৎক্ষণিকভাবে যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে এবং সরকার তা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।‌ এমন প্রস্তাব দিয়েছি ইসির কাছে,” বলেন মেনন।

নির্বাচনে ঢালাওভাবে সেনা মোতায়েন ও তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে ওয়ার্কার্স পার্টি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, “একান্ত প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়োগ করতে পারে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তাদের নিয়োগ দিতে পারে। বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন আমাদের জন্য সুখকর নয়।”

২০১৪ সালের পর কোনো আদমশুমারি না হওয়ায় এবার আদমশুমারি প্রতিবেদন ছাড়া সীমানা পুনর্নির্ধারণে নতুন জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। সেক্ষেত্রে ক্ষেত্র বিশেষে জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, আয়তন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করেছে তারা।

তাদের অন্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা, ব্যালটের পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহার করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকার শর্ত বাতিল করা, নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা, নির্বাচনকে সন্ত্রাস ও পেশি শক্তি মুক্ত করা, নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার বন্ধ করা এবং নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।

বর্তমান সরকারের অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে মনে করছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারা যদি আত্মঘাতী না হয় তবে নির্বাচনে আসাটাই হবে সবচেয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত।”

রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ

রোহিঙ্গারা যেন ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে ইসিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, “আগে আসা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের অনেকে ভোটার হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। তাদের বাছাই করে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।”

দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এ প্রসঙ্গে বলেন, “রোহিঙ্গাদের আমরা ফিরিয়ে দিতে চাই, কিন্তু তারা ভোটার হলে সেটা আমাদের জন্য কূটনৈতিক সমস্যা তৈরি করবে।”