মিয়ানমারের মুরুব্বিদের কাছে যান: প্রধানমন্ত্রীকে বি চৌধুরী

রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে মিয়ানমারকে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সরকার প্রধানকে ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2017, 01:41 PM
Updated : 8 Oct 2017, 01:47 PM

এই তিন দেশকে মিয়ানমারের ‘তিন মুরব্বি’ আখ্যায়িত করে রোববার এক আলোচনা সভায় তিনি এই পরামর্শ দেন সরকার প্রধানকে।

‘মুরুব্বি’ আখ্যায়িত করার ব্যাখ্যায় বি চৌধুরী বলেন, “মিয়ানমারের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র জোগানদাতা দেশ হচ্ছে আমাদের বন্ধু চীন। দ্বিতীয় অস্ত্র সাপ্লাইয়ার দেশ হচ্ছে রাশিয়া। তৃতীয় হচ্ছে ভারত, যারা আমাদের দৃঢ় প্রতিবেশী।”

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যথাসম্ভব শিগগিরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন করুন। ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করুন চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে যান, গিয়ে কথা বলেন,”বলেন তিনি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমনাভিযানের মুখে গত এক মাসে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের সমালোচনা মুখর হলেও চীন ও রাশিয়া বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে দেখছে। তবে ভারত এই বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারতের বিষয়ে বি চৌধুরী বলেন, “সপ্তাহ তিনেক আগে ভারত থেকে একটি শক্তিশালী আর্মি প্রতিনিধিদল মিয়ানমার সফর করেছেন। কী আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।”

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে, যাকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছে সরকার; যদিও বিএনপির দাবি, সরকার কূটনীতি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।

বিকল্প ধারার সভাপতি বি চৌধুরী বলেন, “তিন মুরুব্বিকে যদি ধরতে পারেন, শুধু তাহলেই এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব, তা না হলে না। বাস্তব কথা বললাম।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যর্থতা দেখলেও মিয়ানমারের দিক থেকে উসকানির পরও সতর্ক থেকে যুদ্ধ এড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন বি চৌধুরী।

তবে এই সঙ্কট মোকাবেলায় সব দলকে নিয়ে বসার জন্য সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

“এটা আমরা চেয়ে চেয়ে করব না; প্রধানমন্ত্রী নিজে আহ্বান করবেন- এটা তার বুদ্ধির ওপর ছেড়ে দিলাম।আমরা যদি মনে করি, এই সমস্যার শুধু ইমিডিয়েট সমাধান নয়, লংটার্ম সমাধান প্রয়োজন, আবার যাতে এটা না হয়।”

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বি চৌধুরী বলেন, “প্রতিবেশী এই দেশটির (মিয়ানমার) সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

“আমাদের ভাবতে হবে সামাজিকভাবে কাছে যেতে, বাণিজ্যিকভাবে কাছে যেতে, সাংস্কৃতিকভাবে কাজে যেতে। চীন-কোরিয়া-রাশিয়া কত জায়গায় আমাদের সাংস্কৃতিক দল গেল, কিন্তু নিকটতম প্রতিবেশী মিয়ানমারে কখনও আমাদের সাংস্কৃতিক দল যায়নি।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়ালগ এইড ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক এম গোলাম সারোয়ার।

সভায় বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের দাবি নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের তৎপরতায় নয়, বরং বিশ্বব্যাপী সমালোচনা দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে মিয়ানমারের মন্ত্রী ঢাকা সফরে এসেছেন।

“আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে যদি কিছু হত, তাহলে ভারতের কথা বলবার কথা ছিল, চীন ও রাশিয়ার কথা বলবার কথা ছিলো। জাপানও তো আপনার পক্ষে কথা বলেনি। কী আন্তর্জাতিক তৎপরতা চালালেন?”

“আমি মনে করি, সম্পূর্ণ ব্যর্থ এরা (সরকার)। আরে ভাই, যাদের ধান্ধাই হল যেমনই পারেন খালি ক্ষমতায় থাকেন। যারা গায়ের জোরে সব করতে চায়, তারা ডিপ্লোমেসিতে বিশ্বাসীই নন,” বলেন মান্না।

এই কারণে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো অনিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক।

এক ‘ডিপ্লোমেসিতে’ সরকার‘ভালো’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘ব্যর্থ’ হলেও প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর ‘কূটনীতিতে’সরকার সফল বলে মন্তব্য করেছেন মান্না।

তিনি বলেন, “চিন্তা করেন, কী রকম করে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়া হলো। ওইটা বলে ডিপ্লোমেসি। বাপরে! বুঝতেই পারেনি।”

প্রধান বিচারপতির রোগসম্পর্কে মান্না বলেন, “প্রধান বিচারপতির না কি ক্যান্সার হয়েছে। স্যার ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এখানে আছেন, বাংলাদেশে মেডিসিনের বেস্ট ইন মাই ওপিনিয়ন। ক্যান্সার হলে উনার কাছে রোগী পাঠাবেন। ক্যান্সার রোগীকে দেখতে সজল ব্যানার্জী কেন? উনি হচ্ছে পিজির কার্ডিয়াক চিফ। আমাদের প্রধান বিচারপতির কি হার্টের অসুখ?

“প্রধান বিচারপতি এত চমৎকার একটা রায় (ষোড়শ সংশোধনী বাতিল) লিখেছেন, কোনো বানান ভুল ধরতে পেরেছিলেন? কোনো বাক্যের ভুল ধরতে পেরেছিলেন? আর এক পৃষ্ঠা দরখাস্তের মধ্যে ছয়টা বানান ভুল। এগুলোতে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে বলেন যে, উনি লেখেছেন। সইয়ের সাথে মিলে না।এত বড়ফোর টোয়েন্টি কেন?”