শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “যে চীন সারা পৃথিবীতে মুক্তির কথা বলত, সমাজতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে জাতীয়তাবাদী ও পুঁজিবাদী হয়েছে। তার ফলে একাত্তরে চীনের ভূমিকা আমরা দেখেছি। এই মুহূর্তে মিয়ানমারে যে গণহত্যা হচ্ছে, বর্বরতা হচ্ছে তা তুলনাহীন। এই গণহত্যার সময়ে চীন, রাশিয়া মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন করছে।
“যে ভারত শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিখ্যাত, যে ভারত বাংলার এক কোটি মানুষকে একাত্তর সালে আশ্রয় দিয়েছিল, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল, তারা এখন পুঁজিবাদী হয়ে মিয়ানমারের মতো নৃশংস ও ভয়াবহ সরকারকে সাহায্য করছে। মিয়ানমারে যে বর্বরতা চলছে চরম নিদর্শন হচ্ছে নারী ধর্ষণ, গণধর্ষণ। এই গণধর্ষণ আমরা একাত্তরে দেখেছি।”
পৃথিবীর সব ধর্ষকই পুঁজিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ধর্ষণের কারণ একই, সেই পাকিস্তানি হানাদার, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং আমাদের দেশের ধর্ষক এরা সকলেই পুঁজিবাদী আদর্শে দীক্ষিত। যে পুঁজিবাদ মুনাফাতে বিশ্বাস করে, বিনোদনে বিশ্বাস করে, ব্যক্তিগত স্বার্থে বিশ্বাস করে, সেই পুঁজিবাদের লোকেরাই ধর্ষণ করছে। সমাজতন্ত্রের সংগ্রাম এই পুঁজিবাদীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম।”
অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “অক্টোবর বিপ্লব হচ্ছে এমন একটি বিপ্লব যার তুলনীয় আর কোনো বিপ্লব ঘটেনি। অক্টোবর বিপ্লবে সম্পদের মালিকানার মীমাংসা হয়েছে, এই মালিকানা হবে সামাজিক। সামাজিক মালিকানা হচ্ছে মানবিক মালিকানা, আমরা সেই মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “একটি অভিজ্ঞতা হচ্ছে, অক্টোবর বিপ্লব তার চেতনার মধ্য দিয়ে, শক্তির মধ্য দিয়ে কী কী ধরনের পরিবর্ত করতে পারে। দুই হচ্ছে, অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা থেকে সরে গেলে রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত রাজ্যগুলো তাদের কী অবস্থা হয় ও সারা পৃথিবীর কী অবস্থা হয়। এই দুই অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে রাখতে হবে, এই অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের সামনের পথচলা ঠিক করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা থেকে সরে যাওয়ায় রাশিয়া আজকে মাফিয়াদের রাজ্য। সেই সোভিয়েতভুক্ত রাশিয়া আজকে রোহিঙ্গাদের হত্যাকারী মিয়ানমারের সাথে হাত মিলায়। অক্টোবর চেতনা থেকে সরে চীন গণহত্যাকারীদের সহযোগী হয়। সেই রাশিয়া বাংলাদেশে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। চীন উপকূল ধ্বংস করে বাণিজ্য করতে চায়। ভারত এই রাশিয়া-চীনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে একটি মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে চায়।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সিপিবি-বাসদসহ সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ১২টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত অক্টোবর বিপ্লব উদযাপন জাতীয় কমিটির মাসব্যাপী কর্মসূচি ৭ নভেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে।