চীন-রাশিয়ার ‘ভিটো ঠেকাতে’ জোরদার কূটনীতির আহ্বান বিএনপির

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়া যাতে ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারে সেজন্য সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2017, 10:57 AM
Updated : 27 Sept 2017, 11:35 AM

বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই আহ্বানের কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের কূটনীতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে শুধু নয়, আরো জোরদার করতে হবে; যাতে করে চীন-রাশিয়া তাদের ভিটো দেওয়া বন্ধ করতে পারে। এই দুস্থ মানুষদের পাশে এসে সবাই দাঁড়াতে পারে।”

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে গত এক মাসে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হতে যাচ্ছে।

ভিটো ক্ষমতাসম্পন্ন স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশসহ পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেখানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরবেন বলে কথা রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের ঘটনায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে মিয়ানমার সমালোচিত হলেও ইতোমধ্যে একে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আখ্যায়িত করে দেশটির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া।

এই প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের প্রতি কোনো কঠোর সিন্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাবে দেশ দুটি তাদের ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

তবে পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবে বলে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, মূলত তার ভিত্তিতেই নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, রোহিঙ্গারা যারা এসেছে তাদেরকে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের কথা আমরা বলিনি।

“আমরা বলেছি সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় দিতে হবে, মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে নাগরিকত্ব নিয়ে স্বসম্মানে নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারকে করতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে তা করতে হবে।”

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সবাইকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে আমরা প্রথম থেকে দাবি করে আসছিলাম। তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।

“আমরা বলতে চাই, এই কর্মকাণ্ডে জনবল বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য সেবা বৃদ্ধি করতে এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য অস্থায়ী ঘর-বাড়ি তৈরি করতে হবে।”

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় চেয়ারপারসনের বিবৃতি দেওয়া থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় রিলিফ টিম গঠন ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণসহ বিএনপির নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল।

“আমরা প্রথম থেকে এই অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এখনো আমাদের নেতৃবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছে। সরকারকে ওই সময় বার বার বলেছি, এই মানবিক বিপর্য্য় রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। বিশ্বমত যখন সৃষ্টি হয়েছে, তখন সরকার সক্রিয় হয়েছে।”

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে মঙ্গলবার বিকালে উড়োজাহাজে করে কক্সবাজার পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব।

বুধবার সকালে উখিয়া কলেজ মাঠে সেনাবাহিনীর ত্রাণ ভাণ্ডারে দুই ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর করেন মির্জা ফখরুল। ক্যাম্পের কর্মকর্তা মেজর রফিক এসব ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করেন।

এ সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, লুৎফর রহমান কাজল, মাহবুবুর রহমান শামীম, শরীফুল আলম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শায়রুল কবির খান, উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল হক রাসেলসহ অঙ্গসংগঠন ও বিএনপির কক্সবাজার জেলা ইউনিটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিএনপি মহাসচিব উখিয়ার বাগগুনা, বালুখালি ও থাইমখালী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ত্রিপল, জামা-কাপড়, হাড়ি-পাতিল, খাদ্য সামগ্রী, ওষুধপত্র এবং টিউবওয়েল রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন।