মিয়ানমার সমর্থকদের ‘ভয়ে’ সরকারের সুর নরম: ফখরুল

ভারত ও চীনের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মিয়ানমারকে সমর্থনকারী দেশগুলোর বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কড়া ভাষায় কথা বলছে না সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2017, 04:43 PM
Updated : 23 Sept 2017, 04:54 PM

শনিবার বিকালে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিএনপির জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নাকচের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একথা বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আপনারা (সরকার) এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইনে যা হচ্ছে তাকে গণহত্যা বলতে পারলেন না, এখন পর্যন্ত একে আপনারা গণহত্যা বলেননি, এখন পর্যন্ত আপনারা মিয়ানমার সরকারের কোনো নিন্দা করেননি। এই বিষয়গুলো থেকে বোঝা যায়, এখনও আপনারা সেই বশংবদ রাজনীতির মধ্যে আছেন।

“এখনও আপনারা (সরকার) ভয় পান অন্যরা যারা মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে, তারা আপনাদের প্রতি বিরাগভাজন হয়ে যান সেজন্য আপনারা একথা বলছেন। এখানেই পার্থক্যটা, সেজন্যই আমাদের সাথে ঐক্য করতে চাইছেন না।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ শেষে শুক্রবার নিউ ইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির বিএনপির প্রস্তাব নাকচ করেন শেখ হাসিনা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপির মতো একটি সন্ত্রাসী দল, জঙ্গিবাদী দল-তাদের সাথে বসতে হবে। তাদের সাথে বসে সমাধান করতে হবে-এই কথাটা আর কেউ বলবেন না, যেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।

বিএনপির বিরুদ্ধে হত্যা, দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “বিএনপিকে কেন টেনে আনেন বলেনতো? কেন তাদের সঙ্গে বসতে হবে, কেন তাদের রক্ষা করতে হবে?”  

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের সাথে ঐক্য অন্য কোনো কারণে করতে বলিনি, জনগণের ঐক্য তৈরি করতে বলেছি। আমি বলব, এই সংকীর্ণতা বাদ দিয়ে, এই আমিত্ব বাদ দিয়ে আসুন সমগ্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করুন। ইনশাল্লাহ, জনগণের ঐক্য তৈরি করেই আমরা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।

‘“মিয়ানমারের ব্যাপারে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমাদের কথা খুব স্পষ্ট-এই অমানবিক আচরণ, গণহত্যা বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে।”

১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আলোচনার নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই, মিয়ানমারের সাথে আলোচনা ও কথা বলার এটাই ভিত্তি হতে পারে। দুর্ভাগ্য গণচীনের পক্ষে একদিন শোষিত নির্যাতিত মানুষেরা দাঁড়িয়েছিল সেই গণচীনও রোহিঙ্গা সমস্যাগুলো বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে ভারত ১৯৭১ সালে তাদের দেশে গণহত্যার বিপক্ষে আমাদের আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য দিয়েছিল তারাও আজকে এই সমস্যা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।

“আমরা অনুরোধ করব, জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে, এই হতভাগ্য রোহিঙ্গারা হিন্দু না মুসলমান এই প্রশ্নে আমরা যেতে চাই না। তারা মানুষ। আজকে তারা একটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তাদের মুক্ত করতে হবে, তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এটা বিশ্বমানবতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।”

প্রয়াত নেতা কাজী জাফরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদও জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যাটা ক্ষমতাসীন দলের সমস্যা না, এটা একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান করবে, অন্য কেউ না।

“এক্ষেত্রে গতকাল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে যা বললেন, কাদের সাথে কথা বলব? একজন রাজনৈতিক দল থেকে আসা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন, তার পক্ষে এই ধরনের কথা বলা অন্যায় কথাটা ব্যবহার করতে চাচ্ছি না, এটাই মোটেই যথোপযুক্ত না।

“এটা তার ‍মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়া ঠিক ছিল না। কারণ বাংলাদেশের ক্ষতি হলে শুধু আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে তাতো না, সবারই ক্ষতি হবে। এ ব্যাপারে সমাধান পেতে হলে সবাই মিলে সমাধান বের করতে হবে।”

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাগপা’র চেয়ারম্যান রেহানা প্রধান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নওয়াব আলী আব্বাস খান, মজিবুর রহমান, হোসনে আরা হাসান, প্রয়াত কাজী জাফরের মেয়ে কাজী জয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।