মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব কেন হল না: ফখরুল

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ায় খুশি হলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব না আনার সমালোচনা করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2017, 12:42 PM
Updated : 12 Sept 2017, 12:54 PM

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে মঙ্গলবার কক্সবাজারে যান প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিতে সংসদ প্রস্তাব গ্রহণ হয় একদিন আগে।

মঙ্গলবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আজকে কক্সবাজারে গেছেন, উখিয়া সফর করেছেন এবং তিনি একটি বিরাট বহর নিয়ে গেছেন।

“আমরা এখন পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি তিনি সেখানে কিছু ত্রাণ বিতরণ করেছেন। আমরা শুনে অন্তত এইটুকু খুশি হলাম যে এত দিনে বোধদয় হয়েছে।”

গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। দুই সপ্তাহে এই সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে।

ফখরুল বলেন, “ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলেন, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলেন এবং আজকে প্রথম জাতিসংঘ থেকে একটা বড় মানবাধিকার টিম আসছেন তারা সেখানে যাবেন।

“অর্থাৎ সারা বিশ্ব যখন সোচ্চার হচ্ছে, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল যখন চিঠি দিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদকে যে অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তখন আপনি আজকে গেলেন উখিয়াতে।”

জাতীয় সংসদে নেওয়া প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পার্লামেন্টে আপনারা প্রস্তাব নিয়েছেন, মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

“কিন্তু মিয়ানমারকে নিন্দা জানান নাই। তারা যে এভাবে গণহত্যা করছে, সুপরিকল্পিতভাবে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য কাজ করছে তার জন্য কোনো নিন্দা জানান নাই। আমরা আজকে এই সভা থেকে নিন্দা জানাচ্ছি, আপনারা এই প্রস্তাব (নিন্দা প্রস্তাব) নিতে সাহস করে নাই।”

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার এখনও ‘দ্বিধা-দ্বন্দ্বে’ বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

মিয়ানমার সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখা এবং বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি সরকারের আমলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৯২ সালে এভাবে রোহিঙ্গারা আসছিল আমাদের দেশে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিলেন সীমান্তে। তিনি বলেছিলেন যে তোমরা যদি এভাবে এগুতে থাক, তাহলে এই সেনাবাহিনী নিয়ে আমি তোমাদেরকে বাধা দিতে বাধ্য হবে। তারা (মিয়ানমার সরকার) কিন্তু মেনে নিয়েছিল, এই রোহিঙ্গাদের ফেরতও নিয়েছিল।”

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ১৯৭৮ সালে একটি চুক্তি করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কথাও বলেন ফখরুল।

মিয়ানমার সীমান্তে দুই দেশের যৌথ অভিযান চালাতে সরকারের প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কার বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে? যাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, যাদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, যাদের শিশুদের মেরে ফেলা হচ্ছে, যাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে? সেখানে বিজিবি থাকবে!

“আমরা ঠিক বুঝতে পারি না, তারা কী বলতে চান। পুরোপুরি নতজানু হয়ে গেলে, নিজস্ব কোনো স্বকীয়তা না থাকলে অন্যের ওপরে ভর করে যখন চলতে থাকে, তখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়।”

শান্তিতে নোবেলবিজয়ী অং সান  সু চির দল যখন  ক্ষমতায়, তখন মিয়ানমারে এই গণহত্যার ঘটনাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী যুব দলের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দশম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ ‍বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন বক্তব্য রাখেন।