এ কারণে তাদের ‘লজ্জা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। ‘অতি দ্রুত’ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই সমস্যার সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সপ্তাহ দুয়েক আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরু করলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। এরইমধ্যে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘের ধারণা।
অসহায় এই শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানালে বিএনপি নেতারা প্রতিদিনই তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার দাবি করছেন।
রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতার তথ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে সরব হয়েছে। তাদের অবস্থা জানতে এরইমধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টপত্নী এমিনে এরদোয়ানসহ কয়েকটি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা।
এ নিয়ে শনিবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, “লজ্জা হয় আমাদের যখন দেখি যে, আমাদের সরকার নড়া-চড়ার আগেই ইন্দোনেশিয়া থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলে আসেন, যখন দেখি তুরস্ক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফার্স্ট লেডি চলে আসছেন, যখন দেখি জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন এবং নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দিয়েছেন এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য, তখনও আমাদের সরকারের টনক নড়ে না।”
সরকারের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “শৃঙ্খলিত আছ বলেই আজকে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও তোমরা (সরকার) সঠিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পার না, তোমরা নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পার না।
“আমরা চাই, দেশের মানুষ চায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হোক অতি দ্রুত। এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দেওয়া হোক, তাদেরকে খাদ্য দেওয়া হোক, তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হোক এবং তাদের সম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করা হোক।”
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিএনপির নোংরা রাজনীতি করছে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নাকচ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মমতার কথা বললেই তোমরা সাথে সাথে বলো, আমরা না কি নোংরা রাজনীতি করছি।
“আমরা নোংরা রাজনীতি কখনোই করিনি। নোংরা রাজনীতি করেছেন আপনারা (আওয়ামী লীগ) সেই প্রথম থেকে, সেই ১৯৭২ সালে আপনারা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এদেশের মানুষের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছেন।”
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমাদের কথা স্পষ্ট-যারা দুঃস্থ আছে তারা হিন্দু না মুসলমান আমরা জানি না। তারা মানুষ, মানবতার পক্ষে আমরা কথা বলছি।
“তাদের ঘর থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, জমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, দুই মাসের শিশু-এক বছরের শিশু নাফ নদীর তীরে ভাসছে। এই দৃশ্য আমরা দেখতে পারি না। সেজন্য আমরা বলেছি, তাদের আশ্রয় দেওয়া হোক, তাদের খাদ্য দেওয়া হোক এবং একইসঙ্গে তারা যাতে সসম্মানে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, সেজন্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক যত প্রক্রিয়া আছে তা গ্রহণ করা হোক।”
“আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, এত ভয় পান কেন? ভয় পান এজন্য যে, বিএনপি যদি রাজপথে নেমে আসে, বিএনপি যদি সামনে আসে, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না। সেই কারণে আপনারা বিএনপিকে এত ভয় পান।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।
“২০১৪ সালের মতো আগামী নির্বাচনও একই কায়দায় শেখ হাসিনা গায়ের জোরে করতে চায়, নানা অজুহাতে বিএনপিকে ওই নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়।”
খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরে যথাসময়ে ‘সহায়ক সরকারের রূপরেখা’ দেবেন বলে জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “মিয়ানমারে মানুষকে কচু কাটা নয়, কুপিয়ে হত্যা করছে, তাদেরকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী সাহেব সমর্থন দিয়ে আসলেন। আর আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বলি না কি ওইটা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আর বাংলাদেশ নয়, আওয়ামী লীগ সরকার লেজ গুটিয়ে বসে থাকলেন, উনারা কোনো কথা বলছেন না।
“বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। আমরা চাই প্রয়োজনে আমরা ডাক দেব, প্রয়োজনে আমরা মার্চ করে যাব বার্মার দিকে, লংমার্চ করে যাব। আমার বক্তব্য স্পষ্ট, এভাবে মানুষ হত্যা করতে দেওয়া যায় না প্রতিবেশী দেশে।”
দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বক্তব্য রাখেন।
সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে মহানগর উত্তরের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে নিতাই রায় চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী, কায়সার কামাল, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, তাইফুল ইসলাম টিপু, হাফেজ আবদুল মালেক, কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, ইউনুস মৃধা, মো. মোহন, হেলেন জেরিন খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, খন্দকার মারুফ হোসেনসহ অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।