নতুন করে রোহিঙ্গাদের না নিতে সরকারের অবস্থানের মধ্যে সোমবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।
লন্ডনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসনের বিবৃতিটি দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে আসে।
বিবৃতিতে খালেদা বলেন, “জীবন ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুদের বাংলাদেশে আশ্রয় ও তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমি দায়িত্বরত বাংলাদেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে কয়েক দশকে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক মানতে নারাজ।
কয়েক বছর আগে রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ পানে ছুটলে তখন বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানও উপেক্ষা করে তারা।
নতুন করে শরণার্থীর চাপ সামলাতে অপরাগতার পাশাপাশি না নেওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি তৎপরতা এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার যুক্তিও দেখানো হয় বাংলাদেশ সরকারের কর্ণধারদের পক্ষ থেকে।
গত বছর রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকিতে হামলার পর ফের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ পানে ছুটে। তখনও সীমান্ত বন্ধ রাখলেও মানবিক কারণে কিছু সংখ্যককে ঢুকতে দেওয়া হয়, যে সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।
এবারও একই ঘটনার পর সীমান্তে কড়াকড়ির মধ্যেও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন, তাদের মধ্যে আহতরাও রয়েছেন। অনেকে সীমান্তে বসে আছেন বাংলাদেশে ঢোকার আশায়।
“বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার এলাকায় রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নাফ নদীর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তীরে বসে ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছে। এই দৃশ্য অমানবিক, বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক।”
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
“আমি আশা করি, রোহিঙ্গাদের জীবন ও বসবাসের নিরাপত্তা বিধান ও তাদের ওপর রক্তাক্ত সহিংসতার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নীতি নিয়ে অগ্রসর হবে। আমি এও বিশ্বাস করি- সমমর্যাদার ঐতিহ্যকে সম্মান দেখিয়ে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা সমাধানহীন একটি পরিস্থিতির মধ্যে থাকায় তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্রমাগতভাবে অবনতিতে ফেলবে বলেও মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করেন তিনি।
“রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অমনোযোগী বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই পরিস্থিতি শোচনীয় রূপ ধারণ করেছে। আমি বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”