প্রধান বিচারপতিকে ‘অসুস্থ বানিয়ে’ সরানোর গুঞ্জন শুনছেন রিজভী

বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘অসুস্থ বানিয়ে’ প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরানোর গুঞ্জনের খবর শুনেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2017, 12:18 PM
Updated : 23 August 2017, 12:41 PM

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে ক্ষমতাসীনরা দাবি তোলার মধ্যে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে একথা জানান রিজভী।

ওই রায়ের কারণে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতিকে মানসিক অসুস্থ বলে অন্য কোনো ধরনের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এগোয় কি না, সেটা আজকে মানুষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

“তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে, এটা অজুহাত সৃষ্টি করে যে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ তাকে আর রাখা যাবে না- এই বলে কোনো উদ্যোগ তারা গ্রহণ করে কি না, সেই আলোচনা হচ্ছে।”

সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে আছে- “প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।”

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরত নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন আনা হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে এনেছে।

জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার এই রায়কে ঐতিহাসিক বলছে বিএনপি। রায় বদলাতে সরকার বিচার বিভাগকে চাপ দিচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ।

অন্যদিকে এই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি)

এই পর্যবেক্ষণে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে রায়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি দলের নেতারা কড়া সমালোচনা করছেন, বাক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সিনহাও।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতা ফজলে নূর তাপস অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের পদত্যাগ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন।

ওই প্রসঙ্গ ধরে রিজভী বলেন, “পরিস্থিতি এমনই যে, তাদের একজন খাস মানুষের পদত্যাগ চাইলেন তিনি। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা জেলে গেলে এই অ্যাটর্নি জেনারেলই তাদের কারাগারে আটকিয়ে রাখার জন্য সর্বশেষ চেষ্টা করেন।

“এত অনুগত অ্যাটর্নি জেনারেল আর কখনও আসেননি। হায় তারই পদত্যাগ চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংসদ। এই ফজলে নূর তাপসরা একদিন হয়ত প্রধানমন্ত্রীরও পদত্যাগ চেয়ে বসবেন।”

জোট শরিক ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ’ এর উদ্যোগে ‘চলমান অস্থিরতা : কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য  রাখেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

রাজ্জাককে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়ায় সমালোচনা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা প্রয়াত আবদুর রাজ্জাককে রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “যখন আমাদের চলচ্চিত্র হাঁটি হাঁটি পা পা করেছে সেটাকে একটা মাত্রায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে নিজে যে শ্রম দিয়েছেন; আর্ট  অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি- দুইটাকে সমন্বয় করে একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন আবদুর রাজ্জাক, তার আজ মূল্যায়ন কোথায়?”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতিপর্বের চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ এ রাজ্জাকের অভিনয়ের কথাও তুলে ধরেন রিজভী।

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ নিজের দলের বাইরে যেতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।

“কেউ যদি স্বাধীনতাবিরোধীও হয়, সে যদি যদি জয় বাংলা স্লোগান দেয় এবং এই সরকারকে খুশি করতে পারে, তারা সম্মানিত হবে। একাত্তর সালে পাকিস্তান রেডিওতে যারা কবিতা পাঠ করেছেন, পরবর্তীতে তারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হয়ে গেলেন। কিন্তু ড. পিয়াস করিমের মতো শিক্ষক এবং সিরাজুর রহমানের মতো সাংবাদিক শুধু সরকারের সমালোচনা করার জন্য সম্মানিত হতে পারেননি।”