খায়রুল হক বিচারিক অপরাধ করেছেন: মওদুদ

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ নিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের অবস্থানকে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ আখ্যায়িত করে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, এটা এক ধরনের ‘জুডিশিয়াল ক্রাইম’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2017, 02:48 PM
Updated : 18 August 2017, 02:48 PM

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শুক্রবার রাজধানীর এক আলোচনা সভায় পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়া সাবেক এই প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে একথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।

তিনি বলেন, “যিনি পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রক্ষা করে আসলেন, আজকে তিনি কোন মুখে বলছেন, এই রায় (ষোড়শ সংশোধনী বাতিল) ভুল হয়েছে… আর্টিক্যাল ৯৬ মার্শাল ল এর অধীনে করা হয়েছিল। সুতরাং এটাকে রাখাটা ঠিক হয়নি।

“তাহলে আপনি কেন মার্জনা করেছিলেন। আপনি পঞ্চম সংশোধনীর রায়ে সেটা কেন বাতিল করে দিলেন না? এই যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, ট্রিপল স্ট্যান্ডার্ড, এটা হলো একটা জুডিশিয়াল ক্রাইম। এবিএম খায়রুল হক হ্যাজ কমিটেড এ জুডিশিয়াল ক্রাইম। এটা বিচারিক একটা অপরাধ তিনি করেছেন।”

২০১০ সালের ২৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জিয়াউর রহমানের সময়ে করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে এবং সংবিধানকে পঞ্চম সংশোধনীর আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

বিচারপতি খায়রুল হক আপিল বিভাগের ওই বেঞ্চে ছিলেন। সেই রায়ে সামরিক বাহিনী থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমানের সব সামরিক ফরমান ও দায়মুক্তি তা অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

আদালতের ওই রায়ের আলোকে সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করেছিল সরকার। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ‘অসাংবিধানিক পন্থায়’ ক্ষমতা দখলকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য ও বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয় ২০১১ সালে।

বিচারপতিদের অপসারণে সুপ্রিম সুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের যে ব্যবস্থা পঞ্চম সংশোধনীতে আনা হয়েছিল- তা বাতিল করে ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনী আনে সরকার।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে ‘কটূক্তি’ এবং মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘নেতৃত্বতে অস্বীকার করা চেষ্টা হয়েছে’ বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাদের।

অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের আমলে চালু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে বিএনপি।

গত ১ অগাস্ট রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের পর ৯ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এসে রায়ের পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচাপতি খায়রুল হক।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকলে গণতান্ত্রিক দেশের জনগণের কাছে বিচারপতিদের দায়বদ্ধতা থাকে না বলে ওইদিন মত দেন তিনি।

খায়রুল হকের এ অবস্থানের সমালোচনা করে মওদুদ তার পদত্যাগ দাবি করেছেন।

বিএনপি সরকারের সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, “সারা জাতির কাছে তার (খায়রুল হকের) মার্জনা চাওয়া উচিৎ, ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। বর্তমান সরকারের একজন বেতনভুক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি আজকে সরকারের দালালিতে নেমেছেন, যেটা আমাদের সরকারি আচরণবিধির পরিপন্থি। তার উচিৎ হবে অবিলম্বে পদত্যাগ করা।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

লেবার পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি প্রকৌশলী ফরিদউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নান, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, এমদাদুল হক চৌধুরী, শামসুদ্দিন পারভেজ, মাহমুদ খান, শামীমা চৌধুরী, আহসান হাবিব ইমরোজ বক্তব্য রাখেন।