নিজের লোক ছাড়া আ. লীগ কাউকে চেনে না: ফখরুল

দেশের সব জায়গায় দলীয়করণ ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কাউকে ‘চেনে না’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2017, 03:03 PM
Updated : 12 August 2017, 03:03 PM

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর ৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার ডিআরইউয়ে এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি।

দলীয়করণের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনার গোষ্ঠীর মধ্যে কেউ যদি বিএনপি করে থাকে তাহলে আপনি নাই। শুধু ক্রীড়া অঙ্গনে নয়, সবক্ষেত্রেই এই অবস্থা।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ মূলত অত্যন্ত  সংকীর্ণ একটা রাজনৈতিক দল। তার নিজের বাইরে সে কিছু চিন্তা করতে জানে না, তার নিজের মানুষগুলো ছাড়া অন্য কাউকে চেনে না এবং রাষ্ট্র-দেশ বলতে তারা মনে করে তারাই রাষ্ট্র তারাই দেশ, তারাই সব কিছু। যার ফলে সর্বত্র এতো অন্যায়, অবিচার। এর ফলে বাধ্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় সংকীর্ণতায় চলে গেছে এবং একটা দানবে পরিণত হয়েছে।”

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবির সাবেক উপদেষ্টা কোকোর স্মরণে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে অন্যান্য দল-মতের লোকদেরও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফেডারেশন ও ক্রিকেট বোর্ডে সিপিবির সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, জাসদের হাসানুল হক ইনু, বীর বাহাদুর এবং ২০০১ সালে সাবের হোসেন চৌধুরীসহ নানা মতের লোকদের সদস্যসহ সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছিল।

সরকারের ব্যর্থতায় দেশ ‘খাদের কিনারায়’ পৌঁছে গেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে আমরা এমন একটা জায়গায় চলে এসছি, যেখানে এক কথায় বলা যেতে পারে, আমরা একেবারে খাদের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। এখান থেকে যদি ফিরতে না পারি তাহলে অবধারিত আমরা তলিয়ে যাব, অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যাব।

“আমাদের এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে, সবাইকে ভাবতে হবে। আমরা যদি একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে না পারি, আমরা দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে না পারি তাহলে আমরা আমাদের যে লক্ষ্য জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা, মধ্য আয়ের দেশ করা, একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করা-সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব না।”

সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে আরাফাত রহমান কোকোর অবদান স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৭০ সালের ১২ অগাস্ট। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

কোকোর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বনানীতে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুরে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু, সয়লাব হোসেন টুটুল, ইউসা মিশু, দেবব্রত পাল, বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, নির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল কবির শাহিন, ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের মোস্তাকুর রহমান, মেহেদি মাসুদ, সাইদুর রহমান ডন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

‘সরকার বেসামাল’

কোকোর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত আরেক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মন্ত্রীদের বক্তব্যে সরকারের ‘বেসামাল অবস্থা’ প্রতীয়মান হচ্ছে।

তিনি বলেন, “ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর তাদের মন্ত্রীদের বক্তব্য আপনারা দেখছেন, বেসামাল অবস্থা। তারা জানে, এদেশের মানুষ যদি একবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, আওয়ামী লীগের পাত্তা থাকবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেই বলেছেন আগামী নির্বাচনে যদি তারা বিজয়ী না হয়, তাদের নেতা-কর্মীদের পিঠের চামড়া থাকবে না, তাদের পালানোর পথ থাকবে না। তারা এত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে আছে।”

এই আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।