ডাকসুর দাবিতে আলোচনায় অনুপস্থিত ছাত্রলীগ

ডাকসুর দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ডাকা এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয়নি ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2017, 11:28 AM
Updated : 10 August 2017, 02:22 PM

‘ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় অংশ নেননি উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও, যিনি পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি।

মধুর ক্যান্টিনের সামনে এই সভায় বিএনপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল অংশ নিতে এলেও ছাত্রলীগের বাধায় অংশ নিতে পারেনি।

ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বাম ছাত্রসংগঠনগুলো এই আলোচনায় অংশ নিয়ে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়।

১৯৯০ সালে পর ডাকসু নির্বাচন আর না হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ডাকসুর দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় উন্মুক্ত বিতর্কের আয়োজন করা হয়।

আলোচনায় উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি আসেননি বলে জানান আন্দোলকারীদের কমিটির আহ্বায়ক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপাচার্য স্যারকে চিঠি দিয়েছিলাম, আলোচনা শুরুর আগে ফোনও দিয়েছিলাম; কিন্তু তিনি বললেন, ‘আমি এখানে এসে কী করব? তোমরা আলোচনা কর’।”

ছাত্রলীগের অনুপস্থিতির বিষয়ে মাহাদী বলেন, “চিঠি দিয়ে পরে ফোনও করেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসানকে। উনি বলেছেন, ‘তোমরা করো, আমাদের অন্য প্রোগ্রাম আছে’।”

তবে আবিদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো আমন্ত্রণ পাইনি আমি।”

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স অন্য কারণ দেখান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে ডাকসুর আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নেই। তাদের উন্মুক্ত আলোচনায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীও যায়নি বলে শুনেছি।”

ছাত্রদলের ৩০-৪০ জনের একটি দল সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ডাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।

এরপর ছাত্রলীগ নেতাদের উন্মুক্ত আলোচনা চলাকালে মধুর ক্যান্টিনে বসে থাকতে দেখা যায়।

উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত তুলে ধরে।

আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আশরাফুল হক ইশতিয়াক বলেন “আইন বিভাগে যে বাণিজ্যিক নাইট কোর্সটি চালু আছে, আমরা এটার পক্ষে নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর মতো কোনো প্লাটফর্ম নেই বলে আমরা এই বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছি না।”

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেন।

“আমরা যতবারই ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে উপাচার্যের কাছে গিয়েছি, ততবারই তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন দিলে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হবে’।

“উনি যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, তেমনি তিনি ডাকসুর সভাপতিও। সভাপতি হিসেবে উনি ব্যর্থ। বর্তমান ভিসি অনিয়মের চক্রাকারের বৃত্ত থেকে বের হতে না পারা একজন প্রশাসক।”

ছাত্র ফেডারশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, “ডাকসুর কথা উঠলেই বলা হয় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হবে কিন্তু আবু বকর বা হাফিজুর কেউই কিন্তু ডাকসুর জন্য সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মারা যায়নি।

“শিক্ষকদের মধ্যেও নীল-সাদা দল আছে। নীল দলের আবার দুই ভাগ ও আছে। শিক্ষকদের মধ্যে এত ভিন্নমত থাকলেও তাদের নির্বাচনগুলো ঠিকই হচ্ছে।”

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডাকসুসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে বলে আসছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সদ্য সাবেক ছাত্র মঈন কাদির বলেন, “ডাকসুর প্রয়োজনীয়তার কথা অনেকেই বলছেন, কিন্তু ডাকসু নির্বাচন কীভাবে করা যায় বা কখন করা যায়, সে কথা কেউ বলছেন না।”

আলোচনা শেষে সারমর্ম তুলে ধরেন আহ্বায়ক মাহাদী।

গত ২৯ জুলাই সিনেট অধিবেশন চলাকালে ডাকসুর দাবিতে মানববন্ধনের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। 

অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন না দেওয়া হলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মাহাদী।