বিচার বিভাগের ‘প্রতিপক্ষে’ সরকারের অবস্থান: ফখরুল

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সরকার বিচার বিভাগের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2017, 08:39 AM
Updated : 9 August 2017, 08:39 AM

বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, এটা খুব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে- এই সরকার বিচার বিভাগের প্রতিপক্ষ হিসেবে একটা অবস্থান নিয়েছে।

“আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই রায়ের যে অবজারভেশন- এটা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের কথা, অন্তরের কথা, হৃদয়ের কথা এবং সেটাই তারা (সুপ্রিম কোর্ট) বলেছেন, উচ্চারণ করেছেন। সুতরাং দেশের ১৬ কোটি মানুষ এই রায়ের অবজারভেশনের সঙ্গে আছে এবং তারা একমত।”

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে রেখে আনা সংবিধানের সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর অর্থমন্ত্রীসহ সংসদেও অনেকেই এর সমালোচনায় সরব হন।

রায় নিয়ে মন্ত্রিসভায় প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই রায় দেওয়ার পরে, অবজারভেশন দেওয়ার পরে মন্ত্রিসভায় যে আলোচনা হয়েছে এবং সরকারের কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা যে ভাষায় কথা বলছেন, আমি জানি না আপনারা (আইনজীবীরা) ভালো বলতে পারবেন, তা আদালত অবমাননার দায়ে পড়ে কিনা?”

তিনি বলেন, “তারা সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের যে প্রধান তিনটি স্তম্ভ- সেই স্তম্ভগুলোকে ধবংস করে দিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করছে সরকার নিজেই। আপনারা দেখেছেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে পার্লামেন্টে একটা বিরোধ তারাই তৈরি করে দিয়েছে।”

শিগগিরই সরকারের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সহায়ক সরকারের অধীনে সরার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে তিনি বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। আপিল বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক বলা হয়। সংবিধানের যেখানে যেখানে ক্রটি থাকে, অথবা যে আইনগুলো সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য নয়- আপিল বিভাগ সেই বিষয়গুলো নিয়ে তারা তাদের মতামত প্রদান করেন।

“সংসদে যে আইনগুলো পাস করা হয়েছে, সংবিধান যে সংশোধন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে ইতিপূর্বেও আপিল বিভাগ তার মতামত প্রদান করেছে। জনগণের যেটা প্রাপ্য, জনগণের যে আশা-আকাঙ্খা, সেটাই তারা বলেছে।”

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা পরিষ্কার করে বলা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “যে কথাটি আমাদের সবচেয়ে বেশি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ করেছে, তা হচ্ছে যে- এই শাসকরা এখন দৈত্যে পরিণত হয়েছে।

“তাদের দায়িত্ব ছিলে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার; সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা না করে তারা মনস্টারে পরিণত হয়েছে, দৈত্যে পরিণত হয়েছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে সব কিছু।”

পুরনো ঢাকায় ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

এতে ‘গণতন্ত্রের সমস্ত মূল্যবোধকে রক্ষা করতে'’ আইনজীবীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “শুধু এইটুকু বলতে চাই, এই সরকার যত বেশিদিন থাকবে, ততই বাংলাদেশ অতল গহ্বরে রসাতলে যাবে। গত কয়েকদিনের খবরের কাগজে দেখবেন, কিভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, কিভাবে ধর্ষণ বেড়েছে, কিভাবে খুন বেড়েছে, কিভাবে দেখেছেন যে, সমস্ত আইন অমান্য করে এই ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিজেরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে মানুষকে হত্যা করছে।”

বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কয়েকদিন আগের খবরে বেরিয়েছে, আরো নয়টি পাওয়ার প্ল্যান্ট- যেটা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দেওয়া হয়েছে, যেখানে আরো ২৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাবে বিনা টেন্ডারে। কারণ পার্লামেন্টে আইন করেছে কোনো টেন্ডার পর্যন্ত করতে হবে না, এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন পর্যন্ত করা যাবে না।

“এই যে একটা একনায়কতন্ত্র, এই যে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটা যদি আমরা এখনই বন্ধ না করতে পারি তাহলে আমরা একেবারে ফ্যাসিবাদের যাতাকলে পড়ে যাব এবং একদলের অধীনে পড়ে যাব। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, আপনাদের অধিকার, আমাদের অধিকার কিছু থাকবে না।”

ঢাকা আইনজীবী সভাপতির খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চুর পরিচালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বোরহান উদ্দিন, মহসীন মিয়া, মকবুল হোসেন ফকির, আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান, গোলাম মোস্তফা খান, খোরশেদ মিয়া আলম, মোসলেহ উদ্দিন জসিম, ওমর ফারুক ফারুকীসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।