লন্ডনে আলোচনায় আ. লীগের অংশ না নেওয়া রহস্যের: খসরু

লন্ডনে আয়োজিত বাংলাদেশ বিষয়ক এক সেমিনারে আওয়ামী লীগের অংশ না নেওয়াকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

লন্ডন প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2017, 08:49 PM
Updated : 20 July 2017, 04:50 PM

বুধবার লন্ডনের ব্রিক লেনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই আলোচনায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের তিনজন জ্যেষ্ঠ নেতা লন্ডনে এসেছেন।

“উনারা দুপুরে লাঞ্চ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু তারপরে কেন গেলেন না, এটা রহস্যের, সবার কাছেই একটা রহস্য।”

লন্ডনের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে একজন লর্ডের আয়োজনে ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও আইনের শাসন’ শিরোনামে একটি সেমিনার হয়।

এই সেমিনারে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি লন্ডনে গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা তাতে অংশ নেননি বলে সংবাদমাধ্যমের খবর।

হাউস অব লর্ডসের স্বতন্ত্র সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কারলাইল আয়োজিত ওই আলোচনায় বিএনপির প্রতিনিধিরা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ও মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধি ছিলেন।

ওই আলোচনায় অংশ না নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা আয়োজকদের অপমানিত করেছেন মন্তব্য করে খসরু বলেন, “উনারা দেশে গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না। বিদেশেও প্রমাণ করলেন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, আলোচনায় বিশ্বাস করেন না, সমঝোতায় বিশ্বাস করেন না, যুক্তিতে বিশ্বাস করেন না।”

সরকারি নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগ হওয়ায় ওই সংলাপে অংশ নেননি বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলে খবরে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, “ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এগুলোর উদ্যোগ নেয় না। পার্লামেন্ট সদস্যরা নেন। উনারা (আওয়ামী লীগ) বহু বছর ধরে এটাতে আসছেন। গতকাল কেন উনাদের হঠাৎ করে বোধোদয় হয় যে, এটা উনাদের মিসলিড করা হয়েছে।

“এটা কোনো সদুত্তর উনারা দিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। উনারা কেন আসলেন না সেটার সদুত্তর উনারাই দিতে পারবেন। যে কারণগুলো দেখিয়েছেন, অবশ্যই এ কারণগুলোর কোনো যৌক্তিকতা এখানে নেই।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, আলোচনায় অংশ না নেওয়ার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বসতে আপত্তির কথাও বলা হয়েছে।

কিন্তু তারা এ বিষয়ে আগে আয়োজকদের কাছে কোনো আপত্তি তোলেনি বলে দাবি করেন তিনি।

‘হঠাৎ করে’ আওয়ামী লীগ নেতাদের পিঠাটানে সেমিনার কক্ষে ‘বিব্রতকর পরিস্থিতির’ সৃষ্টি হয় জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উপস্থিত সবাই খুব বিব্রত হয়েছে। তারাও বিব্রত হয়েছেন।

“সবাই অবাক হল, বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হল।… এটা বাংলাদেশের জন্যও বিব্রতকর।”

বিকালে এই সেমিনারের আগে লন্ডনে ‘কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজেও আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন বলে জানান তিনি।

ওই ভোজসভায় যুক্তরাজ্যের পরররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড অংশ নিয়েছিলেন জানিয়ে খসরু বলেন, সেখানে বক্তব্যে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

একসঙ্গে এই মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেওয়ার পর হাউস অফ লর্ডসে সেমিনারে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা আসবেন বলে জানতে পারেন বিএনপি নেতারা।

তাদের অনুপস্থিতিতে সেমিনারের আয়োজক লর্ড কারলাইল ‘হতাশা’ প্রকাশ করেন বলে জানান আমীর খসরু।

‘এটা অসৌজন্যমূলক, অশ্রদ্ধার ও কাপুরুষোচিত’ বলে লর্ডসভার এই সদস্য প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

একে আওয়ামী লীগের ‘অগণতান্ত্রিক’ আচরণের বহিঃপ্রকাশ আখ্যায়িত করে খসরু বলেন, “সেখানে আলোচনায় উঠে এসেছে, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, যারা আলোচনায় বিশ্বাস করে না, যারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে বিশ্বাস করে না, তারাই এটা করতে পারে।”

এর মধ্য দিয়ে জবাবদিহিতে আওয়ামী লীগের অনীহার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন আমীর খসরু।

“জবাব দেওয়ার মতো অবস্থায় কি তারা ছিল না?,” সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, বিএনপির যে কোনো ভাবনায়-সিদ্ধান্তে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবদান থাকবে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের সব বিষয়ে কথা হবে।

“সবকিছু নিয়ে উনারা আলোচনা করবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে খসরুর সঙ্গে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা ছিলেন।