সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নতি কীভাবে হবে: নাসিম

বাঙালিকে ‘অস্থির জাতি’ আখ্যায়িত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ক্ষমতার ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2017, 07:48 PM
Updated : 16 July 2017, 07:53 PM

‘দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচনের ধুয়ো তুলে’ প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তন না এনে শেখ হাসিনাকে আরও সময় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাসিম বলেন, “বাঙালি অস্থির জাতি। তারা মনে করে, পাঁচ বছর পর পরই ক্ষমতার পরিবর্তন করতে হবে। তাদের ধারণা ক্ষমতার পরিবর্তন করলেই ভালো হয়।

“যদি একটা লিডারশিপ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় না থাকে, কীভাবে দেশের উন্নতি হবে? ক্ষমতার পরিবর্তনে একটা মাতৃনিরাপদ দিবসও বাতিল হয়ে গেল। এভাবে কি চলে, বলেন?”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, “একটি শিশু জন্মের জন্য তো মাকে নয় মাস সময় দিতে হয়। বাংলাদেশে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল। হত্যা করা হলো চার নেতাকে।

“এরপর কী পেয়েছি আমরা? আমরা পিছিয়ে গেছি। অন্ধকারের যুগে চলে গেছি। এরপর শেখ হাসিনা আলোকিত বাংলাদেশ দিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে নাসিম বলেন, “শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী, যিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। আমরা ব্যর্থ হইনি। সব দিকেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন তাকে পরিবর্তন করা হবে?

“আপনার ভালোটা আপনাকে বুঝতে হবে। আজ যোগাযোগ ও অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গেছি। তাহলে আমরা কেন তাকে সময় না দিয়ে অন্ধকার যুগে চলে যাব?”

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয় বলে বিএনপি যে দাবি তুলেছে তাকে ‘মামাবাড়ির আবদার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন মন্ত্রী নাসিম।

তিনি বলেন, “একটা আবদার উঠেছে যে, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। অন্য দেশে যেভাবে হচ্ছে, সংবিধানে যে রকম আছে, সেভাবেই নির্বাচন হবে।

“আমেরিকায় ওবামা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করেছেন, ভারতে মনমোহন সিং ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন করেই নরেন্দ্র মোদী জিতেছেন। এখানেও সেভাবেই হবে। সংবিধানকে উপেক্ষা করে তথাকথিত নিরপেক্ষতার নামে অনির্বাচিত লোককে কেন ক্ষমতায় বসাব?”

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘জরুরি প্রসূতিসেবায় গুরুত্বর্পূণ অবদান’ রাখায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ৫৬ জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান বলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা স্বাস্থ্য খাতে এগিয়েছি বলেই স্বীকৃতিও পেয়েছি। এটি শুরু হয়েছে, কিন্তু সব জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি।

“মাঠ পর্যায়ে যারা আছে, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের সবার মাধ্যমেই আমরা মাতৃ মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত অং সেং ডু, ইউনিসেফের প্রতিনিধি সারা বরডাস এডি এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা ‘কাপুরুষত্বের পরিচয় দিয়েছেন’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা ‘কাপুরুষত্বের’ পরিচয় দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভূমিকার সমালোচনা করেন তিনি।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের উদ্যোগে ‘শিক্ষক নির্যাতন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় কামরুল বলেন, “জাতির জনককে যখন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন আওয়ামী লীগের নেতারা কাপুরুষত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

“জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্যরাও কাপুরুষত্বের পরিচয় দিয়েছে। এক-এগারোর পরও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ কাপুরুষত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরাও কাপুরুষত্বের পরিচয় দিয়েছে। মোস্তাকের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখেছি।

“কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা, এই খালিদ মাহমুদ চৌধুরীরা (আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক), আরও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাসহ সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল। আমাদের মধ্যম সারির আইনজীবীরা শেখ হাসিনার পাশে ছিল।”

আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খাদ্যমন্ত্রী।

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “তিনি নাকি চিকিৎসা নিতে দুই মাসের জন্য লন্ডনে গেছেন। লন্ডন যাওয়া তো তার ছেলের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্য আছেই। আরেকটা উদ্দেশ্য আছে। তার মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। বার বার এই মামলা বিলম্ব করতে হাই কোর্টে যাচ্ছেন তিনি। কোনো গ্রাউন্ড ছাড়াই উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন।

“মামলা যখন শেষ পর্যায়ে, তখন তিনি বুঝতে পারছেন, সুপ্রিম কোর্ট-হাই কোর্ট দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। মামলা আর বিলম্ব করতে পারবেন না। সেটা বুঝেছেন বলেই বেগম খালেদা জিয়া আজকে লন্ডনে গেছেন।

“দুই মাসের কথা বলে গেছেন, আসলে কয়েক মাস লাগতে পারে। কবে যে আসবেন ঠিক নেই। তার অনুপস্থিতিতে কোর্ট যাতে মামলাটা চালিয়ে যেতে না পারে, তাই অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে তিনি লন্ডনে গেছেন।”

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নানামুখী ‘ষড়যন্ত্র’ শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেন খাদ্যমন্ত্রী।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলম সাজু সভায় বক্তব্য দেন।