বন্যার্তদের ত্রাণ লুটপাটে ক্ষমতাসীনরা: রিজভী

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গতদের ত্রাণ ক্ষমতাসীনরা ‘লুটপাট’ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2017, 08:54 AM
Updated : 14 July 2017, 08:54 AM

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ এনে লুটপাটের কারণে বানভাসি মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না বলেও দাবি করেন।

রিজভী বলেন, “ভারত থেকে আসা উজানের পানি ও বৃষ্টিতে দেশের উত্তরা-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ১৩ জেলায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব এলাকার দুর্গত বানভাসি মানুষরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।

“সরকারের দুই-একজন মন্ত্রী ফটোসেশন করে ঢাকায় ফিরে আসছেন। স্থানীয় প্রশাসন যৎসামান্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গেলেও তা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে ত্রাণের দেখা পাচ্ছে না বানভাসি মানুষ।”

দলের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ‘ত্রাণ নিয়ে’ অবিলম্বে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান রিজভী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বন্যা কবলিত মানুষের দুঃখ-দুদর্শার চিত্র গণমাধ্যমে ফুটে উঠলেও দুর্গতদের পাশে নেই সরকার। মন্ত্রী ও এমপিরা ঢাকায় বসে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছেন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তারা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করছে না।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশে চালের দাম বাড়ার ‘বিশ্ব রেকর্ড’ হয়েছে মন্তব্য করে এজন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে চালের যে দাম, তার চাইতেও আমাদের দেশে চালের দাম বেশি- বিশ্ব রেকর্ড। সরকার চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এখন তিন বেলা ভাত জোটাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষজন।

“সরকারি হিসাব অনুযায়ীই গত এক মাসে সাধারণ মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আর এক বছরে চালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সরকারি সংস্থা টিসিবিও বলেছে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।”

চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “উনাকে (মন্ত্রী) বলছি, ব্যবসায়ীদের দায়ী করে সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করা যাবে না।

“এরা হচ্ছে- যখনই নিজেদের ওপর হুড়মুড় করে ব্যর্থতা চেপে বসে, তখন অন্যের ঘাড়ে, প্রথমে বিরোধী দলের ওপর চেষ্টা করে। যখন দেখে যে এটা ধোপে টিকছে না, তখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপায়। এটা জনগণ বিশ্বাস করবে না।”

অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “তাদের এই ব্যর্থতা, বর্তমানে এই দুর্বিপাক-দুযোর্গ-অনাহারের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেওয়া হল। মন্ত্রী-এমপি অথবা দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয় হচ্ছে ওই সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ী। গরীব মানুষদের মেরে লুটের টাকার ভাগ সরকারের উচ্চ মহলেই যায়, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না সরকার।”

দেশ থেকে অর্থ পাচার করে ক্ষমতাসীনরা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।  

তিনি বলেন, “আজকে গণমাধ্যমে দেখলাম, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানানোর হিড়িক পড়ে গেছে। সেখানে তিন হাজার ৫৪৬টি বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম নির্মাণ করেছে। দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে এসব হোম করা হয়েছে। প্রভাবশালী কারা তা আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন।

“সাধারণ মানুষের বুঝতে বাকি নেই- কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে। ক্ষমতার অত্যুজ্জ্বল আলোকে ধাঁধিয়ে গিয়ে দুর্নীতির মুকুট মাথায় নিয়ে তুঘলকি কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতির আদি প্রবর্তক ও আবিষ্কার কর্তা হচ্ছে তারা। সুতরাং তাদের শাসনকালে দেশ থেকে লক্ষ-কোটি টাকা পাচার হওয়া সম্ভব।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার ৫৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে জালভোটের মহোৎসব হয়েছে অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালকুদার, এম এ মালেক, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।