শাক দিয়ে মাছ ঢেকে লাভ হবে না: রিজভী

সুইস ব্যাংকে অর্থ লেনদেন নিয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2017, 11:14 AM
Updated : 12 July 2017, 12:33 PM

বুধবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা সর্বজনবিদিত যে, সরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাটে শূন্য হয়ে গেছে। সরকারের লুটপাট আর দুর্নীতিতে তারা এখন টালমাটাল হয়ে গেছেন। আমরা বলতে চাই, সেদিন আর বেশি দূরে নয়- লুটপাটের জন্য একদিন তাদের জনগণের নিকট জবাবদিহি করতেই হবে।

“অর্থমন্ত্রী যতই ‘নৌকা মার্কা-জাহাজমার্কা বাজেট’ দিন না কেন, দেশের অর্থনীতি যে ফাঁপা, শূন্যগর্ভ তা দেশ-বিদেশের কারো নিকট আজ অজানা নয়। তাই যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেন না কেন, তাতে লাভ হবে না।”

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদের পর এতে ‘অতিশয়োক্তি’ রয়েছে বলে মঙ্গলবার সংসদে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

তিনি বলেন, “টাকা পাচারের বিষয়টি বাস্তবে মোটেই তেমন কিছু নয়। কিছু টাকা পাচার হয়, তা অতি সামান্য। এটা লেনদেন ও সম্পদের হিসাব। সাংবাদিকেরা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে পাচার বলেছেন।”

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ এক বছরে ২০ শতাংশ বেড়েছে বলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য প্রকাশের পর তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই বিবৃতি দেন মুহিত।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “অর্থমন্ত্রী একবার বলছেন, ‘সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার হয়নি, লেনদেন হয়েছে। আবার তিনি এও বলেছেন যে, তবে সামান্য কিছু অর্থ পাচার হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে সিলেটের এক সভায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারে আমরাও দায়ী।

“এই ধরনের স্ববিরোধী বক্তব্য আওয়ামী নেতাদের চিরাচরিত টেকনিক। আসলে ক্ষমতাসীনদের উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতারই লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা পাঁচারে জড়িত বলেই তাদের চাপে অর্থমন্ত্রীকে আগের কথা থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে (অর্থমন্ত্রী) আবারো বলিরপাঠা করা হয়েছে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে অভিযোগ করে একে ‘সুদূর প্রসারী নীল নকশা’র বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আজকে একটি দৈনিক পত্রিকায় নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ পদোন্নতি কমিটির যিনি প্রধান- তিনি গণবদলি ও পদোন্নতির বিষয় কিছু জানেন না বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইসির নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার, পুনঃবিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন কমিটির প্রধান যিনি… নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার- এ বিষয়ে ইসির সচিবকে নোট দিয়েছেন। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা দেশবাসীর মধ্যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

“আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ডিসেম্বর থেকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে অশুভ উদ্দেশ্যে এই পরিকল্পিত ও গণবদলির ঘটনা ঘটনো হয়েছে কিনা- সেটি নিয়ে সকলের মনে এক বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের এই ব্যাপক পরিবর্তন একটি সুদুর প্রসারী নকশারই অংশ। আগামী নির্বাচনগুলোকে প্রভাবিত করার জন্য একটা চক্রান্ত জ্বাল বিস্তারের আলামত কিনা- সেটাই দেশের ভোটারদের এখন ভাবিয়ে তুলেছে।”

রিজভী বলেন, “এই গণবদলি ও পদোন্নতির ঘটনায় স্বয়ং ইসির অনেক কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। আমরা মনে করি, এ ঘটনায় শুধু ইসির ভাবমূর্তিই নষ্ট হয়নি বরং নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।”

সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতায় আন্দোলনকারীদের ওপর মঙ্গলবারের এক কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে অভিযোগ করে এর নিন্দাও জানান এই বিএনপি নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।