ফরহাদ মজহারের ‘প্রকৃত ঘটনা’আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে: রিজভী

বাসা থেকে বেরিয়ে ১৮ ঘণ্টা উধাও থাকা ফরহাদ মজহারের বিষয়ে সরকার ‘প্রকৃত ঘটনা’ আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2017, 12:18 PM
Updated : 6 July 2017, 04:52 PM

বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “ফরহাদ মজহার অপহরণকে নিছক সন্ত্রাসীদের অপহরণ বলে চালানোর অপচেষ্টা করে সরকার ও দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অসঙ্গতিপূর্ণ কথা-বার্তাকে, নাটকের যবনিকার অন্তরালে প্রকৃত ঘটনাকে ক্রমাগতভাবে আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে দেশবাসী মনে করে।”

ডানপন্থি অধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত ফরহাদ মজহার গত সোমবার ভোরে ঢাকার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অপহৃত হন বলে থানায় অভিযোগ করে তার পরিবার।

১৮ ঘণ্টা পর যশোরে ঢাকাগামী একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তারা অপহৃত হওয়ার কোনো ইঙ্গিত না পাওয়ার কথা জানায়।

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্যকে ‘নিষ্ঠুর’ আখ্যায়িত করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর কথা-বার্তা দেশবাসীকে চরমভাবে ব্যথিত করেছে। যেমন ফরহাদ মজহার সাহেবের ব্যাগ কখনো কালো, কখনো সাদা বলা হয়েছে।

“পুলিশের একজন ডিআইজি(খুলনা রেঞ্জের) বলেছেন, তিনি ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন, এটি সাজানো নাটক। যুগ্ম কমিশনার বলেছেন, তাকে চোখ বেঁধে তুলে নেওয়া হয়েছে।”

‘আমরা ফরহাদ মজহারের কোনো দোষ খুঁজে পাইনি’- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে রিজভী বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যই সত্য কথা। আমরাও তাই মনে করি, দেশবাসী তা বিশ্বাস করে।

“এই ধরনের একজন গুণীজন, এই মাপের একজন বুদ্ধিজীবী- তিনি কখনোই সাজানো নাটক করতে পারেন না।এই ধরনের মানুষরা এটা করতে পারেন না।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “আজো প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে খবর বেরিয়েছে, ফরহাদ মজহারকে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে মারধর করা হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা-বার্তাঅসঙ্গিতপূর্ণ;একবার বললেন যে ভ্রমণে বেরিয়েছেন, তারপর আরেক কথা। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনা কী, কে দায়ী এটা জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট।”

এক সময় চরমপন্থি কমিউনিস্ট দলের সঙ্গে যুক্ত ফরহাদ মজহারের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় দুই দশক আগে। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করার কথা বললেও তারপরই তার চিন্তার দিক বদল ঘটে।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ‘ক্রুসেড, জেহাদ, শ্রেণি সংগ্রাম’ শিরোনামের প্রবন্ধে তালেবানদের জাতীয় বীর আখ্যায়িত করেছিলেন।তার এক যুগ পরে শাহবাগ আন্দোলনবিরোধী কট্টর ইসলামী সংগঠন হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নেন তিনি, যে সংগঠনটির কর্মসূচিতে বিএনপিরও সমর্থন ছিল।

ফরহাদ মজহারের এই অবস্থা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে ‘অসহায়ত্বকে’ তুলে ধরেছে বলে মনে করেনবিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী।

তিনি বলেন, “তার মতো একজন গুণী ব্যক্তির যদি এমন দশা হয়, তাহলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা কত অসহায় তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেশব্যাপী একের পর এই ধরনের গুম-অপহরণ ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।

“ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ভোটারবিহীন সরকারের আক্রোশের শিকার কে হন কিংবা কার ভাগ্যে কখন কী ঘটে, সে বিষয়ে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন জীবনযাপন করছে দেশের মানুষ।কারণ সরকারের সমালোচনা করলেই নিখোঁজ বা গুমের শিকার হতে হচ্ছে যে কাউকে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন রিজভী।বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট ওয়াচের প্রতিবেদন নিয়েও কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, “দেশে বর্তমান সরকার মানুষকে এখন বিষাক্ত কাঁটার খাঁচার মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। প্রতিটি জনপদে জনপদে, বাড়িতে বাড়িতে মৃত্যু ভয়, গুমের ভয়, অপহরণের ভয়, নিখোঁজের ভয়, বিনা বিচারে আটকের ভয় নিয়ে গভীর আশঙ্কায় মানুষ জীবনযাপন করছে।

“রক্তহিম করা গুম-খুন ও বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকা, নিরাপদে জীবন-যাপন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক তদন্ত ছাড়া গত্যন্তর নাই।”

বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরে দলের নেতা-কর্মীদের উপদ্রুত এলাকায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “দুর্গত এলাকার মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। প্রধানমন্ত্রী যদিও গতকাল বলেছেন, বানভাসীদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। বাস্তবে বানভাসী মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।

“কোনো কোনো এলাকায় খাদ্য, পানি বা চাল না দিয়ে খাওয়ার অনুপযোগী সামান্য কিছু গম দিচ্ছে, যে গম প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শুকাতে কিংবা গম ভেঙে খেতেও পারছে না।এটা কী বানভাসী মানুষকে উপহাস করা হচ্ছে। আসলে লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রীয় খাদ্যভাণ্ডারগুলো এখন যে শূন্য তা প্রমাণিত হচ্ছে।”

সরকারের লবণ আমদানিরও সমালোচনাও করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাহবুবুল হক নান্নু, খোন্দকার মাশুকুর রহমান, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান এবং হারুনুর রশীদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।