এ আঘাত গণতন্ত্রের ওপর: মির্জা ফখরুল

পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি যাওয়ার পথে বিএনপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2017, 09:26 AM
Updated : 18 June 2017, 05:21 PM

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালী এলাকায় ওই হামলার পর রাঙামাটি যেতে না পেরে চট্টগ্রামে ফিরে আসে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলটি।

দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৌঁছে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, এ আঘাত গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। যারা মুক্ত চিন্তার কথা বলে, এ সরকারের খারাপ কাজগুলোর বিরোধিতা করে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার- তাদের প্রতি এ আঘাত।

“যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন- এ আঘাত তাদের প্রতি।”

রাঙামাটির দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সকালে চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে কাপ্তাইয়ের পথে রওনা হন। সেখান থেকে নৌপথে তাদের রাঙামাটি যাওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু ইছাখালী এলাকায় একদল লোক রড ও দা নিয়ে ওই গাড়ি বহরে হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান। 

তিনি স্থানীয় সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদের লোকজনকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছেন। অন্যদিকে হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নেতাদের গাড়ির ধাক্কায় দুই জন আহত হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগের চরিত্র আবার উদঘাটিত হয়েছে। সবসময় মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে এলেও তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ভিন্নমতেও তারা বিশ্বাস করে না। সহনশীলতা বলতে তাদের মধ্যে কিছু নেই।

“আমরা তো সেখানে কোনো জনসভা করতে যাইনি। আমাদের পার্টির মিটিংও করতে যাইনি। যারা নিহত হয়েছেন সেসব পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে যাচ্ছিলাম।”

এই হামলা ‘অবিশ্বাস্য’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের অবস্থা যদি এই হয়, সাধারণ মানুষের অবস্থা কী? আমি মনে করি, এ আক্রমণ গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ। সুস্থ চিন্তার মানুষের প্রতি আক্রমণ।”

জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে’ পরাজিত করতে পারলেই এর প্রতিবাদ হবে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু বলেন, “একদিকে দেশ ও জাতির সমস্ত রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। অন্যদিকে দুর্গত মানুষের পাশেও আমরা দাঁড়াতে পারব না। আপনি এখন ত্রাণও দিতে পারবেন না।

“একটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ সেক্রেটারি জেনারেলের ওপর এ আক্রমণ। এরপর আর বাকি থাকল কি? এরপর কি আর কোনো রাজনীতি থাকে? এরপর তারা কি চায়?”

এক জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, পাহাড়ে এত প্রাণহানির পর সরকারের উচিত ছিল রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা। জনগণের প্রতি তাদের কোনো মায়া-মমতা-দরদ নেই।

পাহাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা পরে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “চেয়ারপারসনের নির্দেশে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসি।

“বিমানবন্দর থেকে আমরা রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথিমধ্যে জানতে পারি সড়কে যে অংশ ভাঙন আছে, সেখান দিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই কাপ্তাই গিয়ে সেখান থেকে নদী পথে রাঙামাটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের গাড়িবহর রাঙ্গুনিয়া থানা অতিক্রম করে ইছাখালী বাজারে পৌঁছায়। সেখানে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল।

“এ সময় ৩০-৪০ জন যুবক লাঠি, হকিস্টিক ও পাথর নিয়ে হামলা চালায়। গাড়ির সামনের কাঁচ একটি বড় পাথর দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। তারপর হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করতে থাকে।”

ওই গাড়িতে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পাঁচ জন আহত হয়েছেন।”

আহতরা হলেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, মাহবুবুবর রহমান শামীম ও ছাত্রদল নেতা গোলাম নবী।

বিএনপির গাড়িবহরের ধাক্কায় দুই পথচারী আহত হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এত বছরের রাজনৈতিক জীবনে এরকম ন্যাক্কারজনক হামলা দেখিনি। গাড়ির সাথে দুর্ঘটনার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

“দিনে দুপুরে তারা হামলা চালিয়েছে, এখন মিথ্যা বলছে।”

সংবাদ সম্মেলনের পর দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানান শামীম।