জিয়ার কারণে নির্বাসিত জীবন: শেখ হাসিনা

পঁচাত্তরে বাবা-মাসহ স্বজনদের হারানোর পর দেশে ফিরতে না পারার জন্য জিয়াউর রহমানকে দাযী করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 10:58 AM
Updated : 7 June 2017, 11:14 AM

তিনি বলেছেন, “১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। খুনি জিয়া আমাকে ও আমার বোন শেখ রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি।”

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে লক্ষ্মীপুরের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শাহজাহান কামালের এক প্রশ্নে একথা বলেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। তখন দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য সেনা কর্মকর্তা জিয়াকে দায়ী করে আসছেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা।

শেখ হাসিনা বলেন, “খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ড চালায়। এরপর হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়।”

স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়ার গবেষণার কারণে ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই জার্মানিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা; ছোট বোন শেখ রেহানাও সেখানে গিয়েছিলেন বেড়াতে।  

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ও রেহানা ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই রওনা হয়ে ৩১ জুলাই জার্মানি পৌঁছাই। ১৫ দিনের মাথায় হঠাৎ শুনি আমরা দুই বোন এতিম হয়ে গেছি, নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে গেছি।”

এরপর দুই বোন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। পরে শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এখন যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য।

ছয় বছর প্রবাসে থাকার পর প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে বাবার দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা (সংগৃহীত ছবি)

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তা জিয়াউর রহমানের নির্দেশে বর্ধিত করা হয়নি। ওই পাসপোর্টও ফেরত দেওয়া হয়নি।”

শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সময় জিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে আসীন থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি নেতারা বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করার পর আমি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসি। ওই সময় জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী বাহিনী সকল বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন।”

দেশে ফেরার পরও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হওয়ার কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

“দেশে ফিরে আমি যখন ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই, আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি। পিতা-মাতা, ভাইয়ের জন্য একটু দোয়া করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পুলিশ পাহারা ও গেটে তালা দিয়ে আমার পথ রুদ্ধ করা হয়। আমি রাস্তার উপর বসে পড়ি এবং আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া পড়ি। ১৯৮১ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোনো মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”

শেখ হাসিনা ফেরার ১৩ দিন পর চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়া। তারপর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ফেরত পান বলে জানান শেখ হাসিনা।

“জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে ১ ঘণ্টার নোটিসে বাড়িটি আমাকে তাড়াহুড়ো করে হস্তান্তর করা হয়।”