‘চুরির সুযোগ’ করে দেওয়ার বাজেট: খালেদা

আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন বাজেট নিয়েও আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 02:29 PM
Updated : 1 June 2017, 02:39 PM

তিনি বলেছেন, “এই বাজেট হল লুটপাটের বাজেট। এই বাজেটে আওয়ামী লীগকে চুরির করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার সংসদে শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।

দশম সংসদ নির্বাচনের বর্জনের ফলে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন এক ইফতার অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান।

শেখ হাসিনাকে ‘স্বৈরাচার’ আখ্যায়িত করে আসা খালেদা জিয়া বলেন, “অর্থমন্ত্রী নিজেও বাজেটে কিছু করতে পারেন না। বাজেটও তৈরি হয় হাসিনার কথা মতো। কাজেই হাসিনা যা চান, বাজেট তাই।”

বাজেটের অঙ্ক নিয়ে তিনি বলেন, “এই বাজেট কি আর বাজেট থাকবে না কি? পরে দেখবেন, এটা একটা প্রকল্প, যে প্রকল্পে এখন আছে অন্তত ১০ হাজার কি ২০ হাজার কোটি টাকা। সেটা দেখবেন ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে। আবার বাড়াবে, ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে। এভাবে বাড়তে থাকে।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “যে বাজেট আপনারা দিয়েছে, সেই বাজেটের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নাই। এই বাজেটে আপনারা জনগণের পকেট কাটতে করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। এই বাজেট বাস্তবায়ন আমরা অসম্ভব বলে মনে করি।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জুন থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সমালোচনাও করেন।

তিনি বলেন, “চালের দাম এত বেশি যে গরিব মানুষ খেতে পারছে না, কাজেই গ্যাসের দাম বাড়ানো বন্ধ রাখুন। লুটপাট বন্ধ করে দেশের মানুষের দিকে একটু তাকান।”

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এখনও কক্সবাজারে কোনো রিলিফ যায় নাই, কেউ যায়নি তাদেরকে (দুর্গত) দেখার জন্য। বিদেশি মিডিয়া থেকে বলছে এসব কথা।

“আজকে আওয়ামী লীগ যে মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারী, খুনী, গুম সরকার- এটা পরিষ্কার। তাদের হাতে দেশের মানুষের জীবন-সম্পদ এবং দেশ কোনটাই নিরাপদ নয়।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বক্তব্য রাখেন খালেদা। এই ইফতারে কয়েক হাজার আইনজীবী অংশ নেন।আইনজীবীদের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিচার বিভাগের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ চলছে বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া। 

তিনি বলেন, “আজ বিচার বিভাগের যে দুরবস্থা বিরাজ করছে, তা প্রধান বিচারপতির বক্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি। বিচার বিভাগের উপর সরকারের যে থাবা এত বেশি যে সব জায়গায় তারা হাত দিয়েছে।

“বিচারকরা ন্যায় বিচার দিতে চান, বিচারকরা বিচারপ্রার্থীদের সুবিচার দিতে চান। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য থেকে আমরা বুঝেছি যে, নিম্ন আদালত পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এবং সেখানে সরকার যা নির্দেশ দেয়, বিচারকদের সেই নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয় এবং রায় দিতে হয়।”

“কোনো জায়গা বাদ রাখেনি, সব কিছু তার (সরকার প্রধান) নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং তিনি সারাজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। এটাই তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য,” বলেন তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবি জানান বিএনপি নেত্রী।

“আওয়ামী লীগ আজ ষড়যন্ত্র করছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে। সেই নির্বাচনে দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করবেন না, কোনো দল অংশ গ্রহণ করবে না। সেই নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ জোর করে করে তাহলে সেই নির্বাচন থেকে তাদের বিদায় নিতে হবে।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান প্রমুখ।

আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তৈমুর আলম খন্দকার, সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, শাহ খসরুজ্জামান, রুহুল কুদ্দুস কাজল, এসএম কামালউদ্দিন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, বোরহানউদ্দিন, খোরশেদ আলম, ইকবাল হোসেন, খোরশেদ মিয়া আলম, ওমর ফারুক, মুক্তার কবির খান, আজিজুল হক বাচ্চু, সাখাওয়াত হোসেন খান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, খন্দকার মাহবুব হোসেন, শাহজাহান ওমর, মীর মো. নাসির, এ জে মোহাম্মদ আলী, আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, আফজাল এইচ খান, ফজলুল হক মিলন, গরীবে নেওয়াজ।