‘দেখে শেখা’র জন্য খালেদাকে ধন্যবাদ হাসিনার

আওয়ামী লীগকে ‘অনুসরণ করে’ ‘ভিশন ২০৩০’ দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2017, 11:36 AM
Updated : 20 May 2017, 11:39 AM

জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের জন্য খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আসা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শনিবার দলের এক সভায় বলেছেন, “তবুও তো তারা একটা পথে এসেছে।”

খালেদা জিয়া গত ১০ মে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভিশন ২০৩০’ তুলে ধরেন, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন, তা সবিস্তারে জানান।

আওয়ামী লীগের ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলে আসছিলেন, বিএনপি তাদের অনুকরণ করছে।

প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলটির রূপকল্প নিয়ে শেখ হাসিনা এতদিন কোনো কথা না বললেও শনিবার গণভবনে দলের বর্ধিত সভায় সূচনা বক্তব্যে বলেন, “আমরা দিয়েছি বলেই তারা দিয়েছে। মানুষ তো মানুষকে দেখেই শেখে।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগের গুরুত্ব তুলে ধরে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। তার কাছ থেকে সবাই শিখবে। এটা খুব স্বাভাবিক কথা।

“সেজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। অন্তত এত যুগ পরে তাদের একটু মাথায় এল… তারা ভিশন ২০৩০ দিয়েছে।”

“তারা শিখেছে। যদি নকল করেও পাস করতে চায়, করতে পারবে। সেটা বাংলাদেশের মানুষ বিবেচনা করবে।”

বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা- ছবি: পিআইডি

ধন্যবাদ দিলেও বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’র বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যারা অর্থ সম্পদ লুটপাট করে, মানি লন্ডারিং করে, এতিমের টাকা চুরি করে খায়; তারা এদেশে দেবেটা কী?

“আমি যদি বিএনপি শাসনামল,২০১৩,২০১৪ ও ২০১৫ সালের তুলনা করি, তবে এই ভিশন একটা ভীষণ অগ্নিকাণ্ড করে মানুষ হত্যাকাণ্ড করা মাথায় আসে.. সামনে এসে যায় বিভীষিকাময় অবস্থা, যা সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। যারা এই অবস্থা সৃষ্টি করেছিলো, তারা জাতিকে কিছুই দিতে পারে না; এটাই হলো বাস্তবতা।”

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের পর হিন্দু সম্প্রদায় ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এবং পরের বছর বিএনপি জোটের সরকার হটানোর সহিংস আন্দোলনে গাড়িতে ছোড়া পেট্রোল বোমায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

“জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসংযোগ বাদ দিয়ে জাতির সামনে কিছু তুলে ধরেছে,” বলেন শেখ হাসিনা।

তবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই ‘লুটপাট করবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন.. নতুন ভবন খুলবে।”

দেশ পরিচালনায় বিএনপি ব্যর্থ হওয়ার বিপরীতে তার দলের সফলতা দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যা বলে, তা করে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল, এটা এমনি এমনি হয়নি, আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশ চালাই না।”

“আমরা দেশ চালাই, দেশের সমস্যা আমরা জানি। আমরা জানি, এদেশের মানুষের সমস্যা কী। আমরা জানি কোন এলাকায় কী অবস্থা আছে।”

সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং কোনো অনিয়ম যেন না হয়; সে দিকে দৃষ্টি রাখতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের জেলা নেতারা- ছবি: পিআইডি

 

বর্ধিত সভায় উপস্থিত জেলা নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “মনে রাখতে হবে যে, আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ যে, জাতিকে আমরা একটা উন্নত জীবন দেব।

“জাতির কাছে দেওয়া ওয়াদা আমাদের পূরণ করতে হবে। যাতে শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে এদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেতে পারে”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের তৃণমূল নেতাদের বলেন, “ক্ষমতা ভোগের বস্তু না। ক্ষমতা হচ্ছে; দায়িত্ব পালন করার একটা সুযোগ।

“এই সুযোগটা আমরা পেয়েছি। জনগণের কল্যাণে প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মাস, প্রতিটি বছর জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এর আগে, আমাদের কোনো বিশ্রাম নাই।”

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “এরসঙ্গে যেই জড়িত থাক.. আমার দলের কেউ জড়িত থাকলেও তাকে ছাড়ব না।”

এই প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “জঙ্গি মরলেই খালেদা জিয়া আহা উহু করে.. যোগাযোগটা কী বের করতে হবে।”

এই বর্ধিত সভায় মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটি এবং সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, উপ-দপ্তর সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।