সেই ষড়যন্ত্রকারীরা এখন আপনার সঙ্গে কেন: হাসিনাকে রিজভী

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীদের শেখ হাসিনা দায়ী করলেও তখন বিতর্কিত ভূমিকা পালনকারীদের এখন সঙ্গে রাখার কারণ জানতে চেয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2017, 11:49 AM
Updated : 19 May 2017, 09:50 AM

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বক্তব্যের একদিন বাদে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন রাখতে চাই, যারা আপনার বাবার রক্ত ডিঙ্গিয়ে শপথ নিয়েছেন এবং সেই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন; তারা ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে কী করে আপনার অধীনে রাজনীতি করলেন, এমপি হলেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা হলেন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন? ”

আওয়ামী লীগের এইচ টি ইমাম, কে এম সফিউল্লাহ, আবদুল মালেক উকিলের পাশাপাশি তৎকালীন ন্যাপ নেতা মতিয়া চৌধুরী, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর কথা বলেন রিজভী।

বিএনপি নেতা্ বলেন, “আপনি কি করে এইচ টি ইমামকে সহ্য করছেন, মন্ত্রী পদমর্যাদায় আপনার উপদেষ্টা বানিয়েছেন।

“ওই সময়ে সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল সফিউল্লাহ, তখন সফিউল্লাহ সাহেব আপনার পিতাকে প্রাচীর টককিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন।”

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মোশতাক সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে পরিচালনা করেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ পরে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তিনি সংসদীয় কমিটির সভাপতিও ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপর তৎকালীন স্পিকার আবদুল মালেক উকিল লন্ডনে গিয়ে ‘ফেরাউনের পতন হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বলেও দাবি করেন রিজভী।

“সেই মালেক উকিল সাহেবের পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগেই আপনি সভানেত্রী হয়েছিলেন। তাকে কীভাবে সহ্য করলেন? যিনি ওই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এত বড় কথা বলার পরও।”

“শুধু তাই নয়, যারা ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিল, সেই ইনু-মতিয়ারা এখন আপনার মন্ত্রিসভা আলোকিত করে বসে আছে।”

জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু বর্তমানে সরকারের মন্ত্রী, তৎকালীন ন্যাপ নেতা মতিয়া চৌধুরীও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মন্ত্রী পদে রয়েছেন। জাসদের তখনকার ভূমিকা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা জুগিয়েছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন থেকে ফেরার দিনটি উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ওই সময়কার প্রসঙ্গ ধরে দলের ভেতরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের কথা বলেছিলেন।

দেশে ফেরার পরও প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। এক দশক আগে জরুরি অবস্থার সময়ও দল থেকে তাকে বাদ দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার বক্তব্য ছিল, তিনি সবাইকে ক্ষমা করেছেন, তবে এসব ভুলে যাননি।

বুধবারের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে আসা শেখ হাসিনার বুধবারের বক্তব্যে ‘কিছুটা উপলব্ধি’ রয়েছে বলে মনে করেন জিয়ার গড়া দল বিএনপির নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সরকারপ্রধান যে বক্তব্য রেখেছেন, সেখানে তিনি কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছেন যে ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সাথে আওয়ামী লীগের নেতারাও ছিলেন।”

তবে একইসঙ্গে জিয়াকে দায়ী করার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, “কিছুটা উপলব্ধি থাকলেও বেশিরভাগই হচ্ছে তার স্বভাবসুলভ এবং অনর্গল মিথ্যাচারের পুনরাবৃত্তি। এসব কথাগুলো (ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়ে) কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বুধবার আলোচনা সভায় বলেননি। শুধু আক্রমণ করছেন বিএনপি ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে।”

“আমি বলব, অন্যদের দিকে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই, আপনার আশে-পাশের লোকদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন,” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন এই বিএনপি নেতা।

দেশে ফিরতে জিয়া বাধা দিয়েছিলেন বলে যে অভিযোগ শেখ হাসিনা করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “তাহলে আপনি ১৯৮১ সালে ১৭ মে কী করে দেশে ঢুকলেন? তখন তো জিয়াউর রহমান সাহেবই রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন।

“বরং আপনি দেশে আসার ১৩ দিনের মাথায় জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। মানুষ এটাও বিশ্বাস করে যে, আপনার পথের কাঁটা ভেবে আপনার পৃষ্ঠপোষকরা মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তান জিয়াউর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

“স্বৈরশাসক এরশাদ রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক আইন জারি করলেও আপনি বলেছিলেন, ‘আই এ্যাম নট আন হ্যাপি’।”

নয়া পল্টনে এই সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দাও জানান।

নাশকতার এক ডজন মামলায় বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বুলুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।

রিজভী বলেন, “এটি সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির আরেকটি বর্ধিত প্রকাশ। স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতির চাপে গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদকে মাটির নিচে মিশিয়ে দিয়ে সরকার জনরোষকে আটকানোর জন্য দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারাগারে আটকে রাখছে।”

শরীয়পুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন দর্জির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির নিন্দাও জানান জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী। হাওর অঞ্চলের ফসলহানি নিয়ে মন্ত্রী ‘ডাহা মিথ্যাচার’ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন জিয়াউর রহমান খান, নাজমুল হক নান্নু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল ইসলাম, মোরতাজুল করীম বাদরু।