একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেড় বছর আগেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।
এর অংশ হিসেবে আগামী ২০ মে বর্ধিত সভায় সারাদেশের জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকদের গণভবনে ডেকেছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
দলটির নেতারা জানান, ওই বৈঠকে সারা দেশ থেকে আসা নেতাদের কাছে দলের সাংগঠনিক অবস্থার খবর নেবেন প্রধানমন্ত্রী, দেবেন নানা পরামর্শ।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বরাবরই বলে আসছেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই তার দলের ‘প্রাণ’।
তৃণমূলের মতামত এবং নিজের চালানো জরিপের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেওয়া হবে জানিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যদের হুঁশিয়ারও করে দিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন জেলায় দলীয় সংসদ সদস্য এবং নেতাদের বিরোধের খবর নানা সময়ই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। আগামী সপ্তাহের সভায়ও সেই বিষয়টি উঠে আসার ইঙ্গিত মিলেছে।
বেশ কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নিজ নিজ এলাকার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কাজের খতিয়ান তৈরি করছেন এবং সুযোগ পেলেই তারা সেগুলো সভানেত্রীর সামনে তুলে ধরবেন।
এলাকার মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে ক্ষোভের কথাই আগে বলছেন তারা।
দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর জেলা সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মো. শাজাহান মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সমস্যা তো সব জায়গাতেই কিছু না কিছু থাকে, প্রধানমন্ত্রী যে সকল প্রশ্ন করবেন আমরা তার উত্তর দেব।”
উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধার সংসদ সদস্যদের নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান গাইবান্ধা জেলা সভাপতি সৈয়দ শামসুল আলম হিরু।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাইবান্ধার এক-দুজন এমপি বাদে সবাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ নেই।
“জনগণের কাছে না থাকলে আগামী নির্বাচনে ভরাডুবি হবে। সুযোগ পেলেই আমি নেতাকর্মী ও জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের অবস্থা নেত্রীর কাছে তুলে ধরব।”
কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি মো. সদর উদ্দিন খানও একই কথা বলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অনেক আসনের সংসদ সদস্যদের কোনো যোগাযোগ নেই। বলতে গেলে নেতা-কর্মীদের খবরও উনারা রাখেন না। সুযোগ পেলে এই বিষয়গুলো তুলে ধরব।”
দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরার জেলা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের ভাষ্য, সারাদেশেই সংসদ সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা দলের জন্য শুভ নয়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের এখানেও অনেক এমপির সঙ্গে দলের ১০ ভাগ নেতাকর্মীরও সম্পৃক্ততা নেই।
“এমপি-নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক উপজেলায় সম্মেলন হলেও কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্ধিত সভায় কথা বলার সুযোগ পেলে বিষয়গুলো তুলে ধরব।”
গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিভাগের একটি জেলার সাধারণ সম্পাদকও তার জেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জেলায় মন্ত্রীও আছে, এমপিও আছে; তারা কাজ করছেন অনেক, তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক তারা রাখেন না।
“উনারা নিজেদের বলয়ের বাইরে আর কিছু বোঝেন না। তারা ঠিক না হলে ভোট তো দুরের কথা এলাকায়ও যেতে পারবে না।”
এই বিষয়গুলো শেখ হাসিনাকে জানানোর ইচ্ছা নিয়ে গণভবন যাবেন জানিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “দেখি সুযোগ পাই কি না?”