প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ‘অসত্য ও বানোয়াট’: বিএনপি

সরকার চলতি অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তাকে ‘অসত্য ও বানোয়াট’ বলেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2017, 03:03 PM
Updated : 15 May 2017, 03:03 PM

সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “গতকাল (রোববার) সরকারের তরফ থেকে প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে, সেটি বর্তমান শাসকগোষ্ঠির মিথ্যাচারের একটি অংশ। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।”

“আমরা বলতে চাই, মনভোলানো কোনো পরিসংখ্যানই দেশের মানুষকে বিশ্বাস করানো যাবে না। এই ধরনের অসত্য পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে না বরং এই মিথ্যা পরিসংখ্যানের ফুলঝুরি দিয়ে সরকার জেনে শুনে বিষপান করছে। অসত্য ও বানোয়াট তথ্যের কারণে জনগণ আরো তীব্রভাবে তাদেরকে প্রত্যাখান করবে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে।

তবে সরকারের দেওয়া তথ্যে দ্বিমত জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংক বলছে,চলতি জুনে শেষ হতে যাওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই প্রতিবেদনেও দাবি করা হয়েছে চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি কমবে, যা হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বিনিয়োগ পরিবেশের অবনতি, প্রবাসী আয়ের বড় ধরনের পতন ও রপ্তানি আয় মন্থর হয়ে আসায় সার্বিক প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হবে।”

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “বর্তমানে আর্থিক খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। রূপ্তানি আয়েও দুরাবস্থা। বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় পোশাক রপ্তানি খাত অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে লুটপাটের কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার খবরে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এরকম অবস্থায় প্রবৃদ্ধির এই পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই।

“আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা যে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মিথ্যার বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে তা দেশবাসী ভালো করেই জানেন।”

অ্যাটর্নি জেনারেলের অপসারণ হওয়া উচিৎ

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট না করে সরকারের আরো সময় চাওয়ারও সমালোচনা করে রিজভী। 

তিনি বলেন, “আজকের শুনানিতে মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সরকার পক্ষের গেজেট প্রকাশে ফের সময়ের আবেদনে লজ্জিত হয়েছে আপিল বিভাগ। সরকার লজ্জিত না হলেও এই লজ্জার সারা জাতির। সরকারের এহেন আচরণ একদলীয় বাকশালী স্বৈরতন্ত্রকে পাকাপাকি একটি ভিত্তি দেয়ারই প্রচেষ্টা।

“আপনারা দেখেছেন, বিচারপতিদের অভিশংসন নিয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা কিভাবে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের ধমকা-ধমকি দিয়েছেন। গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর সরকারের আসল রূপ উন্মোচিত হয়েছে। এই অ্যাটর্নি জেনারেল স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি এক হুমকি। নিশ্চয়ই এই ধরনের অ্যাটর্নি জেনারেলের অপসারিত হওয়া উচিৎ।”

নেত্রকোনার মদন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ‘দলবাজ’ প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনরা তাণ্ডব চালাচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “উপজেলার তিয়শ্রী, কাটাইল, নায়েকপুর, গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মদদে প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামা ওবায়েদ, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।