ঢাকায় বিএনপির কমিটিতে কোণঠাসা খোকার অনুসারীরা

ঢাকায় বিএনপির নতুন কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছে আবদুল আউয়াল মিন্টু ও রুহুল কবির রিজভীর সমর্থকরা, আহ্বায়ক কমিটির মতো দুই ভাগের দুই কমিটিতে স্থান পাননি সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 02:07 PM
Updated : 19 April 2017, 03:19 PM

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের ৭০ সদস্যের এবং উত্তরে ৬৪ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন করেন।

ঢাকায় আগে একটি কমিটিই ছিল বিএনপির। সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও দুই ভাগের জন্য দুটি কমিটি করল।

প্রায় তিন বছর আগে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিবুন্নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময়ও সাবেক মেয়র খোকার সমর্থকদের আশা পূরণ হয়নি।

ঢাকা মহানগর বিএনপির দীর্ঘ সময়ের সভাপতি খোকা যুক্তরাষ্ট্রে থাকাবস্থায় তার অনুসারীদের এবারও হতাশ হতে হল।

খোকার অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক মুক্তা (গোপীবাগ), সাবেক কমিশনার লিয়াকত আলী (দক্ষিণ মৈসুন্দি), সাবেক কমিশনার এম এ সামাদ (কোতোয়ালি), সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হোসেন শিকদার (পোস্তাগোলা), বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল কাদের (গেণ্ডারিয়া), এম শাহেদ মন্টু (সুত্রাপুর), শ্যামপুর থানা সভাপতি মজিবুর রহমান খান, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হারুনুর রশীদ (কলতাবাজার) দীর্ঘদিন নগর রাজনীতিতে থাকলেও ঘোষিত কমিটিতে স্থান হয়নি তাদের।

উত্তরের কমিটিতে সালাম সরকার (উত্তরা), জালালউদ্দিন (এয়ারপোর্ট), আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার (তেঁজগাও), হাজী রহমানের (দারুস সালাম) মতো সাবেক কাউন্সিলর ও নেতাদের স্থান পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন, তাদের অধিকাংশই একটি গ্রুপের। ফলে ভারসাম্যহীন এই কমিটি নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে।”

সাদেক হোসেন খোকা; ঢাকায় বিএনপির এক সময়ের কাণ্ডারী কয়েক বছর ধরে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে

দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন কমিটির অধিকাংশই চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আউয়াল মিন্টু এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমর্থক।   

‘মির্জা আব্বাস-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়’ বলয়ের নেতাদের প্রাধান্য খোকার অনুসারীদের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে দলীয় কর্মীরা মনে করেন।

সাবেক এমপি প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনা, সাবেক কমিশনার ছায়েদুর রহমান নিউটনের স্ত্রী ও পিন্টুর বোন ফেরদৌসী আখতার মিষ্টি ঢাকা উত্তরের সহসভাপতি হয়েছেন।

বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিনকে দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

নতুন কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়ে বলেও অভিযোগ এসেছে।

দক্ষিণের ১৯টি যুগ্ম সম্পাদক পদের তালিকায় কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম টিপুর স্থান ১০ নম্বরে। তার উপরে নয়জনই মহানগরের রাজনীতিতে তার পরে এসেছেন।

দক্ষিণের সহসভাপতি পদে সাবেক কমিশনার নবী উল্লাহ নবীর উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে তুলনামূলক নবীন ইউনুস মৃধাকে। তেমনি সাজ্জাদ জহিরের উপরে ফরিদ উদ্দিন, নাসিমা আখতার কল্পনা, আবু মোতালেব; আরিফুর রহমান আরিফের উপরে তানভীর আদেল খান বাবু; মোশাররফ হোসেন খোকনের উপরে ইশরাত মির্জা ও নিতাই চন্দ্র ঘোষের নাম রয়েছে।

উত্তরের কমিটিতে সভাপতি পদে আব্দুল কাইয়ুমকে রাখা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেক নেতার।

ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যা মামলায় আসামি হয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন তিনি। এই অবস্থায় তার পক্ষে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় হওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে।

তবে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল নতুন কমিটি নিয়ে আশাবাদী।

তিনি বুধবার সকালে নয়া পল্টনে কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কমিটিতে পরীক্ষিত সৈনিকদের স্থান দেওয়া হয়েছে। কমিটির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণরা অগ্রাধিকার পেয়েছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “ভালো কমিটি হয়েছে। নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে এই কমিটি আগামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বলে আমার বিশ্বাস।”

কমিটি নিয়ে চাপা ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ফখরুল বলেন, শূন্য পদগুলোতে অনেককে নেওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে।