‘একতরফা’ নির্বাচনের ষড়যন্ত্রে সরকার: বিএনপি

সরকার আবারও ‘একতরফা খেলা’র মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2017, 09:31 AM
Updated : 18 April 2017, 11:18 AM

মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের সময়ের আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে, বিএনপির প্রত্যেকটি মামলা আবার নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এই সরকার রাজননৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই এই মামলা-মোকাদ্দমা করে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চায়।

“আমরা সরকারকে বার বার বলেছি, আসুন না খোলা ময়দানে, সমান্তরাল ময়দানে একসাথে খেলি। সেটার মধ্যে তারা নেই। তারা আমাদের সবাইকে জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে দিয়ে তারা একতরফা খেলতে চায়। এই খেলা কখনই এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না- স্পষ্ট করে আমরা বলতে চাই।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ভারত থেকে আসা নদীর ঢল ও অতিবৃষ্টিতে নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলহানির বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। গত ১৫ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের হাওর এলাকার প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

“এসব এলাকায় লাখ লাখ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো ও অপ্রতুল। দুর্গত মানুষরা কিভাবে খেয়েপরে বাঁচবে, কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবে- তা ভেবে মানবেতর দিন যাপন করছেন।”

হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে কমিটি গঠন করে ক্ষতিগ্রস্তদের ‍প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করে পরবর্তী ফসল না হওয়া পর্যন্ত তাদের ত্রাণ প্রদান, পুরাতন কৃষি ঋণ মওকুফ, আগামী ফসল উৎপাদনের জন্য সুদবিহীন কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, তেলসহ কৃষি উপকরণ সরবারহ, দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত পুণঃনির্মাণ এবং সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদীসমূহের ড্রেজিং ইত্যাদি দাবি জানান ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। উজানে ভারত ওইসব নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয় অন্যদিকে শুস্ক মৌসুমে পানি আটকে দিচ্ছে।”

এবছর ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণে ওইসব এলাকার নদীর বাঁধসমূহ ‘যথাযথ সংস্কার’ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সারাদেশে নেতা-কর্মীদের নতুন করে হয়রানি করার অভিযোগ করে সম্প্রতি কারাগারে যাওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু, নাটোর জেলা নেতা বাবলু চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান মেম্বার, নওশাদ আলী মাস্টারের মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, তবে সেজন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সকল দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে রেখে দেবেন, নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবেন- আর বলবেন যে তোমরা নির্বাচনে যাও। তাহলে আমরা নির্বাচনে কিভাবে যাব।

“আমরা বার বার বলছি, দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক কোনো স্পেস বা জায়গা নেই। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু নির্বাচনে হলে, আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিলে আমরা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। সকল দলের সমান সুযোগ ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মঙ্গলবার ভুটানে পৌঁছেছেন।এই সফরে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, “ভুটানের সঙ্গে আমাদের একটা জরুরি বিষয় আছে সেটা হচ্ছে জলবিদ্যুৎ। আমাদের আগে প্রস্তাব ছিল, নেপাল, ভুটান, ভারত ও চীন- এসবের সঙ্গে চুক্তি করা দরকার ছিল। ভারত কখনো দ্বিপাক্ষিক ছাড়া অন্য কোনো দেশকে আনতে চায়নি, যার ফলে টোটাল বিষয়টা করা সম্ভব হয়নি।

“যদি দেখি ভারতের মতো উনি খালি হাতে ফিরে আসলেন, দিয়ে আসলেন সব কিছু- তখন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মো. আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, বিলকিস শিরিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, রাবেয়া আলী, রফিকুল ইসলাম হেলালী, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।