সোমবার দুপুরে এক আলোচনায় সম্প্রতি বন্যা কবলিত নেত্রকোণার হাওড় অঞ্চলের মানুষের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “গত পরশু আমি নেত্রকোণার বন্যা কবলিত হাওড় এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশনেত্রীর নির্দেশে গিয়েছিলাম। আমরা মানুষের যে অভূতপূর্ব আবেগ দেখেছি, তাদের যে সাড়া দেখেছি, আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমরা যদি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, আমরা জাতীয় শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, তাহলেই এই অপশক্তি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
সরকার ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বলেই ভারতের সঙ্গে দরকাষাকষি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। সফরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বন্টন সমস্যার সমাধান আশা করা হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনঢ় অবস্থানের কারণে তা হয়নি।
ফখরুল বলেন, “এই সরকার তিস্তা পানি আনবে না, তিস্তার পানি আনার ক্ষমতা তার নাই। কারণ তার তো গণভিত্তিই নাই। সে যে ভারতের সাথে বারগেইন করবে, সেই বারগেইন করার ক্ষমতাই তার নাই।
“এই নতজানু, এই সেবাদাস সরকার দিয়ে আমাদের জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের ন্যায্য হিস্যা আমরা পাব না, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাব না। যেহেতু তারা গণবিচ্ছিন্ন-সেবাদাস, তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।”
কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সিলেট বিভাগ সংহতি সম্মেলনী দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ। সরকার তাকে ‘গুম’ করেছে- বিএনপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ থাকলেও বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, “ইলিয়াস আলী যেদিন গুম হয়ে যান, নিখোঁজ হয়ে যান, সেদিন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সকলের কাছে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না, ভিডিও ফুটেজও দেখা গেছে। আশপাশে যেসব গার্ড-টার্ড ছিল তারা পরিষ্কার করে বলেছিল, তাদের (ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীকে) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে এবং সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিল কারা তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারের লোকেরা তা অস্বীকার করেছে।
“এক ইলিয়াস আলী নয়, আমাদের হিসাব মতে পাঁচশ এর উপরে ইলিয়াস আলীরা গুম হয়ে গেছে, তাদের খোঁজ নেই। সরকার এখনও অস্বীকার করে যে, আমরা এগুলো জানিনা। কিন্তু একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের তুলে নিয়ে গেছে, তারপরও কোনো খবর নেই।”
ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে তুলে ধরতে পরিবারসহ সিলেট বিভাগ সংহতি সম্মেলনী সংগঠনকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “এই যে গুমের রাজনীতি বাংলাদেশে, এটা কী জন্যে? হত্যার রাজনীতি কি জন্যে? শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে। আর এই ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্য অন্য কোনো দেশের পারপাস সার্ভ করার জন্যে। এটা শুরু হলো রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। তারপর পর্যায়ক্রমে এদেশে একের পর বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হলো, কেউ কেউ মারা গেল। আজকে নেতাশূন্য হয়ে আসছে বাংলাদেশ।”
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের হাজারো ইলিয়াস আলী দরকার, গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে, ঘরে ঘরে আমাদের ইলিয়াস আলী প্রয়োজন। একটি আন্দোলন, একটি সংগ্রাম, একটি যুদ্ধ আমাদের করতেই হবে। সেই যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন রাখতে হবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের এই শপথ নিতে হবে- মরব, লড়ব কিন্তু দেশের স্বাধীনতা কারও কাছে বিকিয়ে দেবে না।”
সিলেট বিভাগ সংহতি সম্মেলনীর সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারপারসন ইনাম আহমেদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।