‘তেঁতুল হুজুরের’ সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সখ্যে রিজভীর ‘হায়’

নারী বিদ্বেষসহ নানা বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রীদের কাছে সমালোচিত হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভোটের জন্য সখ্য গড়ছেন মন্তব্য করে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2017, 02:36 PM
Updated : 16 April 2017, 05:40 PM

তিনি বলছেন, “যে আহমেদ শফী সাহেবকে এতো বিরক্ত করেছেন, যে আলেম-ওলামাকে উনি ব্যঙ্গ করেছেন, বিদ্রুপ করেছেন, তাদের যে সমাবেশ হয়েছিল, সেই সমাবেশে কত লোককে হত্যা করা হয়েছে। এখন আবার তার (হেফাজতে ইসলাম) সাথেই সখ্য করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। হায়, এমনটি এর আগে আমরা দেখিনি!”

শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে আত্মপ্রকাশ করা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতা করে।

যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনের সংগঠকদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদের শাস্তির দাবিতে ওই বছর ৫ মে তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে, যাতে সমর্থন যুগিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। মধ্যরাতে পুলিশি অভিযানে হেফাজত কর্মীরা ঢাকা ছাড়লেও আলোচনায় থেকে যায় তারা।

এরপর নারীদের ‘তেঁতুলের’ সঙ্গে তুলনা করে সরকারের মন্ত্রী, নারী অধিকার কর্মী ও সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গন সমালোচনায় বিদ্ধ হন হেফাজত আমির শফী। সর্বশেষ তারা মাঠ গরম করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সম্প্রতি স্থাপিত একটি ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার গণভবনে শাহ আহমদ শফীসহ কওমির ওলামাদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তাদের ওই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ভাস্কর্যটি অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশপাশি কওমির সনদকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন তিনি। 

বামধারার দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই অবস্থানকে দ্বিচারিতা বলছেন জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ধর্মীয় দলের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শাহ আহমদ শফী

রোববার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘অর্পণ বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনার মন্ত্রীরা তেঁতুল হুজুর, কত কী আজে-বাজে মন্তব্য করলেন। এখন আপনি যাচ্ছেন তার সাথে সখ্য করতে। কারণ দেখেছেন যে, এদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী এই সরকারের সাথে নেই। সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনে তো ভরাডুবি হবে। অতত্রব এখন তিনি কিছুটা ভোটের আশায় ইসলামী আলেম-ওলামাদের সাথে দেখা করছেন, কথা-বার্তা বলছেন।

“ভারতের সাথে চুক্তি-টুক্তি করে আসার পরে তিনি দেখেছেন যে, পরিস্থিতি তো ভালো না। এখন মুসলিম ভোট হাতে নেওয়ার জন্য নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।”

তবে তার এসব কর্মকাণ্ডে মানুষের ‘মন ভিজবে না’ দাবি করে রিজভী বলেন, “ভোট আসলে আপনারা দেখেছেন, উনি হিজাব পরছেন, হাতে তসবিহ নিচ্ছেন, যেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাচ্ছেন তখনই উনি নিজেকে প্রগতিশীল দেখানো শুরু করেন, প্রকৃত অর্থেই তিনি কোনো ধর্ম মানেন না, তিনি একজন ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যক্তি। ভোটের সময়ে তিনি কিন্তু পুরো পাক্কা মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করেন। এটা হচ্ছে দ্বিচারিতা, চূড়ান্ত ভণ্ডামি।”

‘অর্পণ বাংলাদেশ’ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দরিদ্র এবং বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নির্যাতনে’ ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে। ২০১৫ সাল থেকে তারা এ কাজ করছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

সংগঠনের সভানেত্রী বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, আবদুল্লাহ হিল কাফি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ইউপিতে ‘ভোট কারচুপি’

এদিকে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে মহিলা দলের এক কর্মীসভায় রোববার অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “আজও ১৫৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে। পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রামে একের পর এক সেই আগের মতোই ভোট কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল করে জোর করে সিল মেরেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, তারপরও কমিশন ভ্রুক্ষেপ করেননি।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা বলেছিলাম- সিইসি আওয়ামী লীগের লোক, উনি কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন না। তার কাছ থেকে আমরা ভালো কিছু পাব না, ভোটাররা ভোট দিতে পারবে না। আমরা আজকে ইউপি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

ভাসানটেক থানা মহিলা দলের এই কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মহানগর উত্তরের সভানেত্রী পেয়ারা মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক আমেনা খাতুন, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার, উত্তরের রোকেয়া সুলতানা তামান্না, রাবেয়া আলম, বুলবুল নাহার বুলু, খোরশেদা বেগম, সাবেরা বেগম, ভাসানটেক বিএনপির আমির হোসেন আমীর, হাজী লিয়াকত আলী, ফজলুর রহমান ফজলু প্রমুখ বক্তব্য দেন।