৫৪টি নদীর হিস্যায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা চায় বিএনপি

তিস্তাসহ ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক দেশগুলোকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2017, 11:45 AM
Updated : 16 April 2017, 12:20 PM

রোববার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই কথা জানান।

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া পরিস্কারভাবে বলেছেন, তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানি আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা বলতে চাই, চুক্তি নয়, খালি চুক্তি দিয়ে কাজ হবে না। চুক্তি তো গঙ্গাও করা হয়েছে, গঙ্গা দিয়ে তো পানি আসে নাই। আমরা তো জানি।

“এই ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির হিসাব হতে হবে, এটার ব্যবস্থাপনা হতে হবে, এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং এই ব্যবস্থাপনা হতে হবে আঞ্চলিক দেশগুলোকে নিয়ে।”

এক্ষেত্রে মেকং রিভার ডেল্টা ও নাইল নদের পানি আঞ্চলিকভাবে বণ্টন ব্যবস্থার উদাহরণ তুলে ধরে আমির খসরু বলেন, “এইগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা আছে, প্রতিষ্ঠান আছে, হিসাব-নিকাশ আছে।”

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর ৫ বছর অতিবাহিত হওয়া এবং তাকে ফিরিয়ে দেওয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়।

আমীর খসরু বলেন, “আমাদের পাঁচশ নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে। আমরা আওয়ামী লীগের আমলে এসব গুম-খুনের বিরুদ্ধে যে বিচারটি করব সেটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে করবো। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জুরিস্টগণ এখানে যোগ দেবেন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিচারকরা এখানে জড়িত থাকবেন।

“আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই বিচার করা হবে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মতো অন্যায়ভাবে কারো বিরুদ্ধে কিছু করবো না। আমাদের বিচার হবে স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যেভাবে লিখিত আছে সেভাবে হবে, সেভাবে তারা শাস্তি পাবে।”

বাংলাদেশে র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুইডিশ রেডিওতে সম্প্রতি প্রচারিত প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “এখন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, গুম-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কীভাবে করা যাবে এবং গুম-খুনের বিরুদ্ধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্য়ায়ে বিচারের ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে মানুষ শুধু নয়, সমস্ত বিশ্ব জানে, আজকে বিরোধী দলকে গুম-হত্যার মাধ্যমে দমন করা হচ্ছে। ”

হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফীর সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “এখন আওয়ামী লীগের অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, ফাউল করতে করতে তারা (ক্ষমতাসীনরা) নিজের পোস্টে গোল দিয়ে দেবে। হেফাজতের বিষয়ে এতোটুকু বললাম, আর বেশি কিছু বললাম না।”

মঙ্গলবার গণভবনের ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস এবং কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “এটা হচ্ছে, ওই যে খেলতে খেলতে একটা সময় শুরু হয় যখন ডেসপারেট হয়ে যায়, তখন ফাউল করতে শুরু করে। যখন খেলায় হেরে যাওয়ার অবস্থানের চলে আসে, তখন খেলোয়াড়রা বেশি বেশি ফাউল করতে শুরু করে, কেউ পায়ে লাথি মারে, কেউ পিঠে লাথি মারে। ফাউল করতে করতে এমন জায়গায় চলে আসে শেষ পর্যন্ত নিজের পোস্টে নিজেরা গোল দিয়ে দেয়।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে যে মানবতাবিরোধী বিচারের নামে যে বিচার হয়েছে, যদিওবা বিশ্ব মানদণ্ডে বিচারের মানদণ্ডে আন্তর্জাতিক জুরিস্টদের মানদণ্ডে এটা সুবিচার করা হয়নি। আমি আর কিছু বিস্তারিত বলতে চাই না।

“যেটা বাংলাদেশে শুধু নয়, আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক জুরিস্টরা ব্রিটিস হাউজ অব লর্ডস থেকে শুরু করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে, আমেরিকান ফরেন ডিভিশন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় একটা কথা বলা হয়েছে এখানে আন্তর্জাতিক মানদদণ্ডে কোনো বিচার হয়নি। বিচার যেভাবে হয়েছে সেটা একটা অন্যায় বিচার।”

সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি শাহিদুর রহমান তামান্না ও নিখোঁজ ছাত্র দল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বাবা সোলায়মান রেজা বক্তব্য দেন।