আমরা আক্রান্ত হলে ভারত বা মিয়ানমারের হাতেই হব: হাফিজ

কোনো দেশের সঙ্গে শত্রুতায় অনুৎসাহী বাংলাদেশ কখনও কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে সেটা ভারত বা মিয়ানমারের হাতেই হবে মন্তব্য করে ভারতের সঙ্গে করা প্রতিরক্ষা চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2017, 04:18 PM
Updated : 15 April 2017, 05:26 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ বলেন, “বাংলাদেশ কারো সাথে যুদ্ধ করতে চায় না। আমরা কল্পনাও করি না কোনো দেশকে আক্রমণ করার। সমরবিদ্যার ইতিহাসে, যুদ্ধ করলে আমরা কার সাথে যুদ্ধ করব? আমরা আক্রান্ত হলে তো ভারত অথবা মিয়ানমারের হাতে আক্রান্ত হব।

“এদের বিরুদ্ধে আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজি থাকতে হবে। যদি আমাদের সকল সিক্রেট বৃহৎ প্রতিবেশীর কাছে চলে যায়, তাহলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হবে- এটি আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের উচিৎ হবে নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা।”

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।

এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন, কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকার দুটি স্টাফ কলেজের সঙ্গে নয়া দিল্লি ও তামিলনাড়ুর দুটি স্টাফ কলেজের সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা’ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক রয়েছে।

এসব চুক্তিকে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে আলোচনায় ভারতের বিরুদ্ধে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর অভিযোগ আনেন বিএনপি নেতা হাফিজ।

“ভারতবর্ষ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ করেছে; পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করেছে, চীনের সাথে যুদ্ধ করেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে তার সম্পর্ক কী রকম? চীনের একটি গৃহযুদ্ধ, প্রক্সি ওয়ার তারা চালিয়েছে, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করিয়েছে।

“নেপালের সাথে তাদের রাজনৈতিক সংঘর্ষ চলছে। নেপাল তাদের (ভারত) সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। নেপালের সাথে যে পানি চুক্তি হয়েছে, মাহাকালি রিভার ট্রিটি, সেটি এমন জায়গায় হয়েছে যে, নেপালে এখন বন্যা হয়। যা কিছু বেনিফিট ভারত নিয়ে নেয়।”

ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার ব্যাপারে প্রত্যেক দেশকে অত্যন্ত সাবধান হয়ে চুক্তিতে যেতে হয় মন্তব্য করে সাবেক মন্ত্রী হাফিজ বলেন, “প্রত্যেকটি প্রতিবেশী দেশের সাথে যার বিরোধ, চীনের সাথে যার যুদ্ধ আছে, নিশ্চয়ই তাদের সাথে বাংলাদেশ কোনো সামরিক চুক্তিতে যেতে পারে না।”

‘ভারতের সাথে সামরিক স্মারক: নাগরিক ভাবনা’ শিরোনামে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘নাগরিক ফোরাম’।

এতে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে হাফিজউদ্দিন বলেন, “পত্র-পত্রিকায় আমি যা দেখেছি, ভারত-বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা হবে। সেই সহযোগিতা তো ইতিমধ্যে আছেই- অফিসার বিনিময়, বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ, এগুলোতো চলছেই।

“নতুন তো কিছুই দেখিনা, যার জন্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করতে হল? তাহলে কী গোপন কিছু আছে এর মধ্যে? বাংলাদেশের মানুষ আজকে এনিয়ে আতঙ্কিত। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার দেশের নাগরিকদের স্বার্থ বিবেচনা করেই হয়ত সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এটি জনগণকে জানিয়ে দিতে কোনো অন্তরায় আমরা দেখছি না।”

প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকের প্রতিটি বিষয় ‘পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে’ জনগণকে অবহিত করা হবে বলে আশা করেন এই বিএনপি নেতা।

সফরে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণ সহায়তা সমঝোতা স্মারকে সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দিন।

ভারতীয় অস্ত্রাদি ‘টপ ক্লাস নয়’ দাবি করে অস্ত্র কেনা নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি হতে পারে না বলে ভাষ্য এই বিএনপি নেতার।

“একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়ে আমরা দেখেছি, এখনো জানি তাদের আমর্স ইকুপমেন্ট টপ ক্লাস নয়। তারা পৃথিবীর সবচাইতে বড় অস্ত্র ক্রয়কারী দেশ। যারা নিজেরাই এতে অস্ত্র ক্রয় করে, তাদের কাছ থেকে আমরা অস্ত্র ক্রয় করতে যাব কেন?

“চাইনিজ ট্যাংক নিশ্চয়ই ভারতীয় ট্যাংকের থেকে সুপিরিয়র, চাইনিজ এয়ারক্রাফট সুপিরিয়র, রাশিয়ান মিগ অনেক সুপিরিয়র- এসব দেশের সাথে চুক্তি হতে পারে।”

ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি প্রকাশে বিএনপির দাবি মধ্যে চীনের সঙ্গে বিএনপির আমলে সম্পাদিত চুক্তি জনগণের সামনে প্রকাশ না করে গোপণ রাখা হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এর জবাবে চীনের সঙ্গে বিএনপি ‘পারচেজ এগ্রিমেন্ট’ করেছিল দাবি করে হাফিজউদ্দিন বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন যে, ‘চীনের সাথে যখন চুক্তি হয়েছিল, সেটা কী দেশবাসীকে জানানো হয়েছিলো?’ চীনের সাথে অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি হয়েছিল, কয়েকটা ট্যাংক পেয়েছিল বা অন্যান্য কোনো কিছু পেয়েছে- আমি বিস্তারিত জানি না। এটা একটা পারচেজ এগ্রিমেন্ট।”

তবে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হতেও বাঁধা নেই বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।

“চীন কোনোদিন বাংলাদেশকে আক্রমণ করবে না, মাঝখানে অন্য রাষ্ট্র আছে। চীনের সাথে আমাদের কমন বর্ডার নেই। চীন ঐতিহাসিকভাবে কোনো দেশ দখল করে নাই, কোনো দেশকে কলোনি বানায়নি, এটি তাদের ঐতিহ্য। তাদের সাথে চুক্তি করা নিরাপদ।”

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানিবন্টন সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে এক সময়ের পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজ বলেন, “ প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেলেন, কৈ, পানি তো আমরা পেলাম না। বাকি জিনিস তো আমাদের প্রয়োজন নেই।

“পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিস্তার পানি শুধুই পশ্চিমবঙ্গের। এটা কী পৈত্রিক সম্পত্তি নাকি যে শুধুই পশ্চিমবঙ্গের। পানি এমনই একটি প্রাকৃতিক সম্পদ যে, সেই নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী প্রত্যেকটি জাতিগোষ্ঠির ন্যায্য অধিকার আছে সেই নদীর পানির অংশ পাওয়ার।”

সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ‘ট্রানজিট’ দেওয়ায় বাংলাদেশের কোনো লাভ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।

আলোচনায় নাগরিক ফোরামের সভাপতি সারোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মাইদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুরাদ হামিদ খানসহ অবসর নেওয়া সেনা কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।