এটা আপস নয়: ওবায়দুল কাদের

সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের উদ্যোগ এবং কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে সমালোচনা হলেও এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ‘আপসের’ কোনো বিষয় নেই বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2017, 09:32 AM
Updated : 13 April 2017, 09:37 AM

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “হেফাজতে ইসলামের সাথে আমাদের কোনো অ্যালায়েন্স হয়নি। হেফাজতের চিন্তাধারার সাথে আমাদের মিলমিশ হয়ে গেছে- এ ধরনের ধারণা কোথা থেকে এল?”

জনগণের ‘আবেগ এবং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার স্বীকৃতি’ দিতেই প্রধানমন্ত্রী ‘বাস্তবসম্মত’ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্তব্য করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেছেন, “এটার মানে এই না যে কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপস হয়েছে। কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপসের কথা হাস্যকর।”

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে গত ডিসেম্বরে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হলে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন এর বিরোধিতা শুরু করে।

ওই ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানিয়ে হেফাজতের পক্ষ থেকে ৫ মে মতিঝিলে ফের সমাবেশেরও হুমকি দেওয়া হয়। ওই দাবিতে সমর্থন জানায় সরকারসমর্থক ওলামা লীগও।

গত মঙ্গলবার গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই ‘মূর্তি’ তারও পছন্দ নয়। সেটি সরাতে যা যা দরকার, সরকার তা করবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।

ওই অনুষ্ঠানেই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমান স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

এর সমালোচনায় সিপিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার সঙ্গে মিতালি স্থাপনের’ এই নীতি আত্মঘাতী হবে।

কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জঙ্গিবাদ গেঁড়ে বসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত।

ছাত্র ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তকে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং সংবিধানের মৌল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক’ বলা হয়।

এমনকি সরকারের শরিক দল জাসদও এ নিয়ে আপত্তি জানায়। হেফাজতকে ‘তেঁতুল হুজুর গোষ্ঠী’ আখ্যায়িত করে জাসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “সামান্য ছাড় দেওয়া হলে তারা আবারও বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।”

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে এসে ভাস্কর্য ও কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের।

তিনি দাবি করেন, হেফাজতের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধারণার ‘কোনো মিল নেই’।

“আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, এখানে হেফাজতে ইসলাম মূল বিষয় না। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যেতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রী একটা বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর কওমি মাদ্রাসার সবাই হেফাজত করে এটা কে বলেছে?”

‘হেফাজতে মিতালি হবে আত্মঘাতী’- বাম নেতাদের এমন হুঁশিয়ারির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সামাজিক যে বাস্তবতা, এখানকার জনগণ যেটা ভাবে, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের রাজনীতির রিয়েলিটি হচ্ছে- আমাদের জনগণের অনুভূতি ও আবেগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যারা বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তারাই এদেশের সত্যিকারের প্রগতিশীল।”

গণভবনের অনুষ্ঠানে শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কাদের বলেন, “কোনো ব্যক্তি বা হেফাজত কি বলল… আমরাতো হেফাজতের সাথে কোনো ‘কম্প্রোমাইজ’ করিনি। আর হেফাজতের সাথে কোনো বিষয় নিয়ে আলাপও করতে যাইনি। আমরা বাংলাদেশের ৭০ হাজার কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের তো ইগনোর করতে পারি না।”

আওয়ামী লীগ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে- বিএনপি নেত্রীর এমন অভিযোগও ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে এটা তাদের অভিযোগ। ধর্মীয় শিক্ষাকে আমরা আধুনিক করতে চাই। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকায়ন করতে হবে।”

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সুবহান গোলাপ এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।