বাংলাদেশে এ ধরনের ‘ভারত ফোবিয়া’ তৈরির পেছনে দায়ী হিসেবে নিজেদের রাজনীতির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির ১৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ১৯তম কাউন্সিল অধিবেশনে মন্ত্রী একথা বলেন।
ওবায়দুর কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আগামী এপ্রিলে ভারত যাচ্ছে। আমাদের দেশের একটি মহল আছে, তারা বলছে, গেলরে গেল, ভারত হয়ে গেল। আমাদের দেশে অহেতুক ইন্ডিয়া ফোবিয়া কাজ করে।”
এসময় ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময়ের প্রসঙ্গ টানেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“৪১ বছর পর সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন কে করেছে, শেখ হাসিনা সরকার। ছিটমহল বন্টন সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে ভারতের সাথে ইতিবাচক দ্বার উম্মোচিত হয়েছে, এতে বাংলাদেশের মানচিত্রে ১০ হাজার একর যুক্ত হয়েছে।”
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তিতে ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে অনুযায়ী ২০১১ সালে মনোমহন সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি প্রটোকলের আলোকে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাতে দুই দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়।
এসব ছিটমহলের বিনিময়ে অতিরিক্ত ১০ হাজার একর জমির নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে আসে, যা এতবছর ভারতের অংশ হিসেবে ছিল।
মুজিব-ইন্দিরা চু্ক্তির আলোকে এই ছিটমহল বিনিময় হলেও স্বাধীনতার পরপর করা এই চুক্তিকে ‘একটি মহল’ ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘গোলামী চুক্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছিল মন্তব্য করে তাদের সমালোচনা করে দলটির নেতা ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “গঙ্গার পানি চুক্তি কে করেছে, সেটা কি আপনি ভুলে যান। ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই, জাতীয় স্বার্থে বন্ধুত্ব চাই। যারা এক সময় বলেছিল বঙ্গবন্ধু ভারতের সাথে গোলামীর চুক্তি করেছিল, যদি গোলামী চুক্তি করতেন, তাহলে ১৯৭৫ এ হত্যাকাণ্ডের পর আমরাই ক্ষমতায় থাকতাম।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে গোপন প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে পারেন বলে বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে কোনো চুক্তি গোপন থাকবে না বলে জানান কাদের।
গত সপ্তাহে রাজধানীতে এক মানববন্ধন থেকে ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর আলোচ্য বিষয় আগেই প্রকাশ করার দাবি জানান বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। একইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ভারতে সফরে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার।
এর জবাবে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “তথ্য প্রবাহের বিস্ফোরণের যুগে কোনো কিছু গোপন থাকবে না। জনগণের কাছে কোনো তথ্য গোপন রাখা সমীচীন মনে করি না, সামরিক হোক আর অসামরিক হোক।
“জাতীয় স্বার্থ ও স্বার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে যে কোনো চুক্তি হতে পারে। আমেরিকার সাথে, রাশিয়ার সাথে, অনেক দেশের সামরিক চুক্তি আছে; এটি নিয়ে গেলরে গেল, ইন্ডিয়া হয়ে গেল, এ ইন্ডিয়া ফোবিয়া ঠিক না।”
এসব নিয়ে রাজনীতিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিৎ মন্তব্য করে দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ বলেন, “মনে রাখবেন, শেখ হাসিনা মাথা নোয়াবার নেত্রী নয়।”
ভারতের ‘লাইন অব ক্রেডিটে’ গণপরিবহন সংগ্রহ নিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “৬০০ নতুন বাস পাওয়ার কথা ছিল ইন্ডিয়ার লাইন অব ক্রেডিটে, এ বছর আসার কথা ছিল। নিম্নমানের কোনো পরিবন আনতে চাই না, নিম্নমানের গাড়ি চীন, কোরিয়া থেকে এসেছিল। এটি আমাদের দেশের গণপরিবেহনের সমস্যা বেশিদিন মেটাতে পারেনি।
ঠিকাদারদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “কাজ যেন কোনো অবস্থাতে বিলম্ব না হয়, বিল হয়ত একটু দেরিতে হয়, তবে বিল পাবেন। কারণ সরকারের টাকা, বিল দেরিতে পেলে দুর্ভোগে পড়বেন না, কিন্তু রাস্তাগুলো সচল না হলে দুর্ভোগে পড়বেন।
“যে রাস্তাই আমরা করি, রাস্তার মানটা বজায় রাখবেন। এদেশের গরীব মানুষের ট্যাক্সের টাকা, তাদের টাকাটা যেন যথাযথভাবে খরচ হয়, তা লক্ষ্য রাখবেন।”
প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি, এক পশলা বৃষ্টি হলে রাস্তায় গর্ত হয়ে যায় নষ্ট হয়ে যায়; এটি খুব কষ্ট লাগে। এছাড়া আমি হতাশ হই, যখন দেখি প্রকৌশলীরা স্টেশনে থাকেন না, বিনা অনুমতিতে লিভ নেন।”
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তাদের জন্য ভাল আবাসন ও গাড়ির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
“ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা আবাসন সমস্যায় থাকেন। অনেকেরই ভাল গাড়ি নেই। কোনো ঘটনা ঘটলে অটোরিকশা করে যায়, ভাল কাজ করতে ভাল গাড়ি লাগে। মনে শান্তি না থাকলে কাজ করবে কিভাবে। ভাঙাচূড়া ঘর প্রকৌশলীদের, সারা বাংলাদেশে প্রকৌশলীরা যেন ভাল আবাসন পান এবং ভাল গাড়ী পান সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।
“নিজদের বিবেকটা নিয়ে কাজ করবেন। নিজের পকেট স্ফিত করবেন, এটা যেন লক্ষ্য না হয়। প্রথমে অনেক রাগারাগি করেছি, এখন আর করি না।”
সারা দেশের যেসব জায়গায় রাস্তা দখল হয়েছে সেগুলো উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সমিতির সভাপতি মো. আব্দুন নুমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ এবং সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুনতাসির হাফিজ।
অনুষ্ঠানে সওজ অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন, উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ এবং নতুন সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী ও কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করেন সমিতির নেতারা।