জিয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ‘র’, দাবি রিজভীর

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে ‘র’ এর হাত ছিল বলে শেখ হাসিনা বলার পর এবার জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির হাত ছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2017, 12:46 PM
Updated : 15 March 2017, 12:53 PM

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আলোচনার মধ্যে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এই দাবি তুলে বলেন, “র কাদের স্বার্থে কাজ করে, দেশের জনগণ ভালোভাবেই জানে।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে পালাবদলে ক্ষমতা নেওয়া তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়া ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত ছিল পাশে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর উল্টো দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক হলেও তাকে ‘পাকিস্তানপন্থি’ বলে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

জিয়া হত্যাকাণ্ডে ‘র’ এর সম্পৃক্ততার অভিযোগের পক্ষে ভারতের সানডে সাময়িকীর একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন রিজভী।

এই সাময়িকীর তখন সম্পাদক ছিলেন এম জে আকবর। কংগ্রেসঘেঁষা এই সাংবাদিক রাজনৈতিক আদর্শ বদলে এখন বিজেপিতে আছেন। ভারতে নরেন্দ্র মোদীর বর্তমান সরকারে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

রিজভী বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা একটি ফাইল খুলেছিল, যা ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘সানডে’ তে ছাপা হয়েছিল প্রায় ২৫-২৬ বছর আগে।

জিয়াউর রহমান

“সেই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই আসার পর ওই ফাইলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগে ইন্দিরা গান্ধী এই ফাইলটি চালু করেন।”

“ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসলে ওই ফাইলটি আবার চালু করা হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমান নিহত হন কিছু উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকের হাতে।”

জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর ১৯৮০ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর পদে ফেরেন কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। মাঝের সময়টুকুতে সরকারে ছিল জনতা দল নেতৃত্বাধীন জোট, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দুজন মোরারজী দেশাই ও চরণ সিং।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলতে থাকে। তারই এক পর্যায়ে ক্ষমতারোহন করেন জিয়া। তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরও অনেকগুলো ব্যর্থ অভ্যুত্থান হয়। এসব অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের জিয়া কঠোরভাবে দমন করেন। তখন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমনই এক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হওয়ার পর ওই অভ্যুত্থানের নেতা হিসেবে চিহ্নিত করে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে চট্টগ্রামেই মেরে ফেলা হয়, যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া জিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য সামরিক আদালতের বিচারে দোষি সাব্যস্ত সেনাবাহিনীর ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

জিয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম রহস্যাবৃত একটি বিষয়।

জিয়ার স্ত্রী বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৪ সালে এক সমাবেশে তার স্বামীকে হত্যার জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদকে দায়ী করেন।

এইচ এম এরশাদ

জিয়ার মতো করেই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এরশাদ নয় বছর দেশ চালানোর পর শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণআন্দোলনে উৎখাৎ হয়েছিলেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের মর্যাদায় রয়েছেন।

খালেদা জিয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এরশাদ তখন বলেছিলেন, “আমি জানি, জিয়ার হত্যার সময় তার রুমের পাশে কে ছিলেন। আমি জানি, জিয়ার প্রকৃত খুনি কে।”

কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছিলেন, “ওই সময় ক্ষমতায় ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। মঞ্জুরকে ধরার জন্য তিনি ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।”

১৯৮১ সালের পর দুই বার খালেদা ক্ষমতায় যাওয়ার পরও স্বামীর খুনের বিচারের উদ্যোগ না নেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এরশাদ; তবে তিনি কী জানেন, তা এখনও জানাননি।