ইভিএম দুরভিসন্ধিমূলক: বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএম ফেরানোর যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন তার পেছনে ‘দুরভিসন্ধি’ দেখছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2017, 09:20 AM
Updated : 16 Feb 2017, 10:54 AM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, “জনগণের দৃষ্টিকে সিইসির দিক থেকে অন্যত্র সরানোর জন্য ই-ভোটিং ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ম্যাজিক।”

ই-ভোটিং চালুর বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী যে ই-ভোটিং ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক, জনগণের ভোটকে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে জালিয়াতি করার প্রচেষ্টা মাত্র। আমরা মনে করি এটি প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ভেল্কিবাজিরই বহিঃপ্রকাশ।

“বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর উচ্চাভিলাষের কাছে সংগ্রামী জনগণ নিজেদেরকে সঁপে দেবে না। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের যেকোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে।”

কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ার দিন বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইসি গঠন নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপেও আগামী সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তখন আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছিলেন, ই-ভোটিং বলতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণকে বোঝাচ্ছেন তারা।

এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইভিএম চালু করলেও স্থানীয় নির্বাচনের বাইরে তার প্রয়োগ এখনও হয়নি। বিএনপির আপত্তি ও যন্ত্র নিয়ে জটিলতায় সদ্য বিদায় নেওয়া কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন ইভিএম নিয়ে এগোয়নি।

শপথের মাধ্যমে সদ্য দায়িত্বভার নেওয়া নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি এখনও কাজ শুরু করেনি।

এরমধ্যেই নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “যে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের অভিপ্রায় পূরণ করতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, নিজেদের ঘরের ছেলেকে সিইসি বানিয়েছেন। তারা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে, এটা কেউ বিশ্বাস করে না।

“প্রধানমন্ত্রীর ই-ভোটিং করার যে কথা বলেছেন, এটি সরকারের ভোটারবিহীন নির্বাচন করার আরেকটি ডিজিটাল প্রতারণা কিনা তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, তার (প্রধানমন্ত্রী) ঘোষণা জনগণকে আরেকটি তামাশার বায়োস্কোপ দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নয়।”

ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও গণনা দ্রুত হয়। এ পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার, বাক্স ও সিল লাগে না বলে তা সাশ্রয়ীও। ভোটার একটি যন্ত্রে বোতাম চেপেই তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং গণনা হয় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে।

তবে স্বয়ংক্রিয় এই ইভিএমে জালিয়াতির আশঙ্কার পাশাপাশি এর কারিগরি বিষয় উপলব্ধি করতে এদেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর একটি অংশ সমস্যায় পড়তে পারে মনে করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

“বাংলাদেশে এখনো অনেক মানুষ নিরক্ষর। এতো টেকনিক্যাল বিষয় উপলব্ধি করা বা বুঝা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এই পদ্ধতিতে ই-ভোটিং এর সার্ভার সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সুতরায় তাদের জন্য ভোট কারচুপি করা খুবই সহজ হবে।

“পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও যারা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের নিয়ম চালু করেছিল, এই ব্যবস্থায় ক্রটি থাকায় তারাও সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করলেও এটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

বাংলাদেশে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম ইভিএম ব্যবহার হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি ওয়ার্ড, নরসিংদী পৌরসভা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচন ইভিএমে হয়েছিল।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএমের প্রস্তুতিও রেখে গিয়েছিল শামসুল হুদার কমিশন। কাজী রকিব কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর শুধু রাজশাহী ও রংপুরে ছোট পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় এ প্রযুক্তি চালু হলেও পাঁচ বছরের মাথায় কারিগরি ত্রুটি নিয়ে ইসি-বুয়েট দ্বন্দ্বের পাশাপাশি বিএনপির আপত্তির মধ্যে ইভিএম অধ্যায়ের ছেদ পড়ে।

ফের ইভিএম চালুর বিষয়ে সরকারের আগ্রহকে ‘গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে আওয়ামীকরণের মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা’ বলছেন রিজভী।

“আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও কারসাজির উপরই ভর করে; তারা জনগণের ওপর ভর করে না, ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদেরকে আত্মসন্মানহীন নিপীড়কে পরিণত করে। প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা ক্ষুধা এতো তীব্র যে, নিজেকে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় রাখার জন্য গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই আওয়ামী বস্তার মধ্যে পুরে রেখে লাশ ও রক্তস্নাত নির্বাচনী ব্যবস্থা কায়েম করেছেন।”

নতুন সিইসি নূরুল হুদা সম্পর্কে রিজভী বলেন, “উনি কে, বিসিএস ৭৩ ব্যাচের অফিসার। মানুষের একটা আসল নাম, ডাক নাম থাকে না। আসল নাম হচ্ছে ৭৩ ব্যাচ। এর ডাক নাম হচ্ছে তোফায়েল সার্ভিস।

“অর্থাৎ কোনো পরীক্ষা-টরিক্ষা নাই, জাস্ট সুপারিশ দিয়ে এটা করা হয়েছে। এরা চাকরি জীবনে কোনো যোগ্যতাই দেখাতে পারেন নাই। সেই ব্যক্তিকে করা হয়েছে সিইসি, আওয়ামী লীগের ঘরের ছেলে। তাদের (আওয়ামী লীগ) কথা অনুযায়ী চলবে বলে তাকে সিইসি করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।