এমপি লিটন হত‌্যা: জামায়াতকে দায়ী করছেন শেখ হাসিনা

গাইবান্ধায় দলীয় সংসদ সদস‌্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত‌্যাকাণ্ডের জন‌্য সরাসরি জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2017, 04:18 PM
Updated : 4 Jan 2017, 05:32 PM

তিনি বুধবার গণভবনে দলের এক সভায় বক্তব‌্যে উত্তরাঞ্চলের জেলাটিতে জামায়াতের তৎপরতা ঠেকাতে লিটনের সক্রিয়তা তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “সে (লিটন) জামাতের বিরুদ্ধে সবসময় ছিল। এমনকি গোলাম আযম ওখানে মিটিং করতে চেয়েছিল, সেই মিটিং ও (লিটন) করতে দেয়নি, বাধা দিয়েছিল।

“সেই থেকে জামাতের একটা ক্ষোভ ওর উপর ছিল। ওকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আর অবশেষে তারা সেই হত্যাকাণ্ডটা ঘটাল।”

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নে শাহাবাজ গ্রামে গত ৩১ ডিসেম্বর বাড়িতে ঢুকে লিটনকে হত‌্যা করে যায় কয়েক দুর্বৃত্ত।

তিন দিনেও পুলিশ খুনি শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা শুরু থেকে জামায়াতকে দায়ী করে এলেও দলটি তা অস্বীকার করে বলছে, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে তাদের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।

লিটনের বোনেরা সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের আহ্বান জানালেও তার স্ত্রী গাইবান্ধা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি জামায়াতকেই দায়ী করেছেন।

তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯৮ সালে সুন্দরগঞ্জে গোলাম আযমকে নিয়ে জামায়াতের এক সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিলেন লিটন। তার জের ধরেই তাকে হত‌্যা করা হয়েছে।

“সে সময় তার (লিটনের) গুলিতে আহত জামায়াতের ফতেখাঁ গ্রামের ক্যাডার হেফজসহ আরও দুর্ধর্ষ জামায়াত ক্যাডাররা লিটনকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে এবং ফোন করে দীর্ঘদিন থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।”

মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার প্রারম্ভিক বক্তব্যেই লিটন হত‌্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

গত এক যুগের মধ‌্যে এই প্রথম কোনো সংসদ সদস‌্য হত‌্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। এর আগে ২০০৫ ও ২০০৪ সালে হত‌্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই দুই সংসদ সদস‌্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টার।  

শেখ হাসিনা জামায়াতের পাশাপাশি তাদের জোটসঙ্গী বিএনপিকেও ‘হত‌্যার রাজনীতির’ জন‌্য দায়ী করে বলেন, “মানুষ হত্যা করা বিএনপির চরিত্র।”

লিটন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, ‘যেভাবেই হোক তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার’ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

গুপ্তহত্যার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি না, ওদের (বিএনপি-জামায়াত) আরও কী পরিকল্পনা আছে। আন্দোলন করে সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যা।”

সৌরভকে গুলি নিয়ে লিটনের ‘চরিত্র হনন’

লিটনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গত বছর তার গুলিতে সুন্দরগঞ্জে এক শিশুর আহত হওয়ার কথা তুলে ওই ঘটনা নিয়ে তার ‘চরিত্র হনন’ করা হয়েছিল বলেও মন্তব‌্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

গণভবনে বুধবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় শেখ হাসিনা

২০১৫ সালের ২ অক্টোবর ভোরে সুন্দরগঞ্জের দহবন্দ ইউনিয়নের গোপালচরণ এলাকায় চাচার সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে সাংসদ লিটনের ছোড়া গুলিতে আহত হয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন সৌরভ।

দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ এই শিশুকে দীর্ঘদিন রংপুরের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তার বাবার করা মামলায় এমপি লিটনকে কয়েকদিন কারাগারেও থাকতে হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, “একটা ঘটনা আমার খুব খারাপ লাগে। মাঝখানে একটা ঘটনা ঘটে গেলো, একটা বাচ্চা ওর গুলিতে আহত হয়। সেটা নিয়ে পত্র-পত্রিকা এমনভাবে লেখালেখি করল এবং ওর ক্যারেক্টার অ্যাসাসিন করল।

“ঘটনা যেটা ছিল, সেটা আর কেউ তুলে ধরল না। ওকে মারার জন্য ‘অ্যাম্বুশ’ করে রাখা হয়েছিল। যেহেতু ও সবসময় সতর্ক ছিল, কাজেই ও কেনোমতে সেখান থেকে বেঁচে আসে। ওই সময়ের গোলাগুলিতে যে ছেলেটা (সৌরভ) আহত হয়; সেও কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল।”

শিশুর পায়ে গুলির অভিযোগে আগাম জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার পর হাই কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসছেন গাইবান্ধার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

২০১৫ সালের ওই ঘটনা গণমাধ্যমে ‘ফুলিয়ে ফাপিয়ে’ প্রচার করা হয়েছে বলেও মন্তব‌্য করেন শেখ হাসিনা।

“মামলার পর তার বন্দুকের লাইসেন্স জব্দ করা হয়। তার অস্ত্রটা নিয়ে যাওয়ার পর থেকে সে আতঙ্কে থাকত যে যে কোনো সময় তাকে আক্রমণ করবে। ঠিক সেই ঘটনাটাই ঘটল। ওর বাসার ভেতরে ঢুকে ওকে গুলি করে হত্যা করল।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “চরিত্র হনন করতে চাইলে করেন, কিন্তু একটা মানুষের জীবন যাবে, এই ধরনের ঘটনা না ঘটানোই ভালো। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হল সে একটা মহাঅপরাধী।”