ইসি নিয়োগে জরুরি ভিত্তিতে আইনের প্রস্তাব ওয়ার্কার্স পার্টির

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করে সেই আইনে সাংবিধানিক কমিটি গঠনের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে রেখেছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2016, 03:51 PM
Updated : 27 Dec 2016, 03:51 PM

বিকল্প হিসাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দিয়ে সার্চ কমিটি করার প্রস্তাব রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলটি।

নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসাবে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে ৮ দফা প্রস্তাব দেয় ওয়ার্কার্স পার্টি।

সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশাবাদী যে, কিছু একটা বেরিয়ে আসবে এই সংলাপ থেকে।

“উনি আশাবাদী, এখান থেকে অন্তত কিছু একটা বের করা সম্ভব হবে। আমরাও আশাবাদী, তার এই উদ্যোগ সফল হোক এবং সার্থক হবে- এটা আমাদের বিশ্বাস।”

রাজনৈতিক বিরোধ অব‌্যাগত থাকার মধ‌্যে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে যোগ দেওয়ার পর রাজনীতিতে স্বস্তির ভাব দেখছেন অনেকেই।

এই সংলাপের পর রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তার অধীনেই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হবে।

নতুন ইসি গঠনের নিজেদের প্রস্তাবের বিষয়ে মেনন বলেন, “মূলত যে বিষয়টি বলেছি ওনাকে, এত বছর ধরে আমরা ইলেকশন কমিশনের আইন করতে পারি নাই, যদিও সংবিধানের ১১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে সে আইনের বিধান রয়েছে।

“সে আইনটি আমরা মনে করেছি, খুব জরুরি ভিত্তিতে করা যায়, যদি তিনি অধ্যাদেশ জারি করে বা পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন ডেকে এটা করেন।”

ওই আইনের অধীনে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব ওয়ার্কার্স পার্টির, যে কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, বিরোধীদলের নেতা থাকবেন, প্রধান বিচারপতি থাকবেন, স্পিকার থাকবেন ও অ্যাটর্নি জেনারেল থাকবেন।

“সাংবিধানিক কাউন্সিল, তারা বিভিন্ন যে নাম প্রস্তাব হবে, সেগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবেন, রাষ্ট্রপতি সেই তালিকা থেকে বেছে নেবেন,” বলেন মেনন।

আইন পাস এবং তার আলোকে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন সম্ভব না হলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

মেনন বলেন, “গতবার সার্চ কমিটি যেভাবে করা হয়েছিল সেভাবে, আমাদেরটা একটু ভিন্ন গতবারের চাইতে.. আমরা মনে করি, প্রধান বিচারপতি যদি অপারগ হন তাহলে আপিল বিভাগ থেকে তার প্রতিনিধি একজন এবং বিভিন্ন প্রকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান... যেমন ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, মহাহিসাব রক্ষক-নিয়ন্ত্রক, দুদক- এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দিয়ে সার্চ কমিটি করতে হবে।

“আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, এরা তিনজন করে ১৫ জনের নাম প্রস্তাব করবেন এবং এই প্রস্তাবের পর তারা সেখান থেকে বাছাই করে, প্রত্যেক নামের পেছনে তারা তিনজন করে নেবেন এবং এটা সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে যাবে, তারা সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন।”

পাঁচজন নির্বাচন কমিশনারের মধ‌্যে দুজন নারী রাখার সুপারিশ করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

মেনন বলেন, “এমনি অন্য জায়গায় আমরা ৩০ শতাংশের কথা আমরা বলেছি, সেই বিধানটা আমরা এখান থেকেই শুরু করতে চাই। সেখানে অন্তত দুজন নারী যেন নিয়োগ দেওয়া হয়।”

রাষ্ট্রপতির কথায় কমিশনে একজন নারী প্রতিনিধি রাখার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

“উনি একটা কথা বলেছেন, সেটা আমি বলতে পারি। উনি বলেছেন, একটি ক্ষেত্রে কনসেনসাস এসেছে, একজন নারী কমিশনে আসবেন। ইতোমধ্যে নাকি একটি ক্ষেত্রে কনসেনসাস পাওয়া গেছে।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সংজ্ঞায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীকে অন্তর্ভূক্ত করার যে প্রস্তাব বিএনপি বা অন্য দলসমূহ করেছে ’তা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়’- দলের এমন বক্তব্য একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি।

প্রস্তাবে ‘নির্বাচনে টাকার খেলা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ’ গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের মতো নির্বাচন কমিশন আইনেও নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে জানান মেনন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, নুর আহমদ বকুল, ইকবাল কবির জাহিদ, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহ্সান ও মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।