নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গোপনকক্ষে না গিয়ে সবার সামনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান; বলেছেন, আইসক্রিম যেন তৈরি রাখা হয়।
Published : 22 Dec 2016, 02:48 PM
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন শামীম। এরপর মেয়র প্রার্থীদের সাদা ব্যালট উঁচিয়ে সাংবাদিকদের দেখান, যেখানে নৌকা প্রতীকে সিল মারা ছিল।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের সবুজ ও গোলাপী ব্যালটও এ সময় তার হাতে ভাঁজ করা ছিল। অন্য হাতে ছিল দুই আঙুল উঁচানো বিজয়ের চিহ্ন।
ভোটারদের ভোটকক্ষের ‘গোপনকক্ষে’ গিয়ে ব্যালটে সিল মারার বিধান থাকলেও শামীম তা ভাঙলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে তার ‘আর কোনো বিরোধ না থাকার’ প্রমাণ দেখানোর জন্য।
শামীম ও আইভীর দ্বন্দ্ব তাদের পারিবারিক উত্তরাধিকার। ওসমানদের বিরোধী শিবির থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আইভীর বাবা আলী আহমেদ চুনকা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে চলে যান। তখন প্রবাস থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন আইভী। ২০০৯ সালে শামীম দেশে ফেরার পর দুজনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়।
২০১১ সালের নির্বাচনে দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আইভী এই শামীমকে হারিয়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হন। এরপর বিভিন্ন ঘটনায় তাদের বিরোধী চরমে ওঠে।
এরপর ৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান দাবি করেন, আইভীর সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই, দলেও কোনো বিভেদ নেই; আইভী তার ‘ছোট বোন’। আর ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে।
“তবে শাস্তি আমি আইভীকে একটা দেব। শাস্তিটা হবে ২২ তারিখের পরে। জয়লাভ করার পর নেত্রীর কাছে যাব, আপনাদেরও বাইরে রাখব। চিন্তা কইরেন না। আমি আইসক্রিম খেতে খুব পছন্দ করি। ওকে ফাইন করব। এবং বলব আমাকে প্রচুর পরিমাণ আইসক্রিম খাওয়াও। বিকজ আই লাভ আইসক্রিম। আমাকে ওকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।”
ওই বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোট দিতে এসেও মনে করিয়ে দেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ছেলে শামীম।
বেলা আড়াইটার দিকে তিনি খানপুরে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি কেন্দ্রে পৌঁছেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন।
জবাবে শামীম বলেন, “ভোট দিয়ে আসি, তারপর কথা বলি। আইসক্রিম রেডি করেন, আইসক্রিম খাব।”
নির্বাচনে না থেকেও ভোটের আগে-পরে আলোচনায় থাকা এ সাংসদ এরপর ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে নিজের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করেন।
কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হচ্ছে, যেটা নষ্ট করার জন্য কয়েকটি মিডিয়াসহ একটি মহল ব্যাপক চেষ্টা করেছিল। আমরা প্রমাণ করেছি, নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেমন শান্তিপূর্ণ, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগও...”
পাঁচ বছর আগে নিজে নির্বাচন করেছিলেন। এবার ভোটারের উপস্থিতি কেমন দেখতে পাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে শামীমের জবাব, ‘উপস্থিতি খারাপ না’।
এ নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আশা করি আগামী জাতীয় নির্বাচনও এভাবে নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে শান্তিপূর্ণভাবে হবে। আজকে যেমন জনগণ নৌকার পক্ষে রায় দেবে, আগামীতেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে রায় দেবে।”
এই সংসদ সদস্য বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘দুটি টার্গেট’ ছিল।
“প্রথম টার্গেট ছিল নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা। আমরা সেটা পেরেছি।
“আরেকটি চ্যালেঞ্জ নৌকার বিজয়। নৌকাও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।”
আইসক্রিমের কথা আবার মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আইভীর বিজয় নিশ্চিত দেখে বলেছি- হয় খাব, না হয় খাওয়াব। নৌকার বিজয় হবে।”
প্রকাশ্য ভোট দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে এক প্রশ্নে এমপি শামীম বলেন, “আমি ভেবেছি সবাই সাংবাদিক। নির্বাচনী আচরণবিধিতে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারে কিনা আমি জানি না। আপনারা যদি ঢুকতে পারেন, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক, তারা আপানাদের পিছে পিছে ঢুকে পড়েছে। এতো কর্মী এসেছে বুঝতে পারিনি। ওরা ঢুকে পড়েছে।”
আইভী-শামীমের বিভেদের খবরের কারণেই এটা করলেন কি না জানতে চাইলে শামীমের উত্তর, “সংবাদের খোরাক দেওয়ার জন্য আমি নিজেকে রক্তাক্ত করলাম।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাজাহান বলেন, “অবশ্যই ভোট দিতে হবে গোপনীয়ভাবে এবং গোপন কক্ষে গিয়ে। প্রকাশ্যে দেখানোর বিধান নেই। এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন ও বেআইনি।”
বিষয়টি নিয়ে কমিশন অভিযোগ পেলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।