এদিকে নির্বাচনের তিনদিন বাকি থাকতে সোমবার ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসাবে নগরে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের। এদিন রাত ১২টা থেকে বহিরাগতদের অবস্থানে থাকছে নিষেধাজ্ঞা।
গণসংযোগের একদিন হাতে থাকতে সোমবার ভোটারের কাছে যাওয়ার ব্যস্ততা ছিল প্রার্থীদের। বিএনপির মেয়রপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন ২৫ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।
বিকালে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগে গিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, “এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেভাবে তৎপর রাখার কথা নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে সেভাবে যেন করা হয়।”
“তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকার পরিস্থিতি বুঝে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে, সেটা যেন না হয় সে দাবি আমরা জানাচ্ছি,” নগরীর শায়েস্তা খান রোডে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর মিডিয়া সেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সোমবার প্রায় সব এলাকায় মাইকিং, মিছিল বা ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সমর্থন চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা।
সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।
সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গত নির্বাচনেও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। আমি এবারও আশা করি প্রচুর পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উনি (সাখাওয়াত) হয়তো ভয় পাচ্ছেন, না হলে অভিযোগের জন্য শুধু অভিযোগ করছেন। আমরা সমানতালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। এমন কোনো ঘটনা হয়নি উনি প্রচার চালাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বা কেউ কিছু বলেছেন।”
সদ্য বিদায়ী মেয়র বলেন, নির্বাচনের প্রচারের আর মাত্র একদিন বাকি। যে উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ১৬-১৭টা দিন কাটাল, বাকি দুটা দিনও যেন উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে এবং ২২ তারিখে অবশ্যই যেন মানুষ নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়। উৎসবের আমেজ নিয়েই তারা যেন ভোট দেয়।
বিএনপির প্রার্থীকে দুর্বল ভাবছেন না উল্লেখ করে আইভী বলেন, “সাখাওয়াত হোসেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাকে দুর্বল ভাবার কোনো অবকাশ নেই। যখন কেউ নির্বাচন করতে আসে নির্বাচন, নির্বাচনই। প্রার্থী প্রার্থীই।”
এদিকে সকালে শহরের মিশনপাড়া ও চাষাঢ়া এলাকা দিয়ে দিনের গণসংযোগ শুরু করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
এ সময় সাখাওয়াত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে একই অবস্থা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান।
সাখাওয়াত বলেন, “শুনেছি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে; এটাকে আমি হাস্যকর বলে মনে করি। স্ট্রাইকিং ফোর্স মানে কী? কোথাও কোনো ঘটনা ঘটার পরে তারা সেখানে উপস্থিত হবে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর উপস্থিত হলে সেটা তো কার্যকর হল না। ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে, সেই ব্যবস্থার দাবি ছিল আমাদের।”
এরপর সিদ্ধিরগঞ্জের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে সমর্থন চান নির্বাচনের মাধ্যমে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এই আইনজীবী।
বিকাল ৩টায় শায়েস্তা খান রোডে প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে হোল্ডিং ট্যাক্স কমানো এবং আবর্জনা, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত নগরী গড়াসহ ২৫ দফা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন তিনি।
বিজিবি মোতায়েন, বহিরাগত নিষিদ্ধ
বৃহস্পতিবার ভোট সামনে রেখে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় টহল শুরু করেছেন বিজিবি সদস্যরা।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২২ প্লাটুন বিজিবি নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল দেবে। তারা মূলত ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসাবে কাজ করবে।
মঙ্গলবার থেকে বিজিবিকে পুরোদমে সক্রিয় দেখা যাবে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “সব মিলে আমরা যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম, সেটি করতে পেরেছি। আমাদের হাতে আর তিনদিন বাকি আছে। আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে। শান্তিপূর্ণ থাকবে।”
সিদ্ধিরগঞ্জে ১২ প্লাটুন, সদরে সাত প্লাটুন ও বন্দর এলাকায় ৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি। প্রতিটি প্লাটুনের সদস্য সংখ্যা ২০ জন।
নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, “নির্বাচনী প্রচরণা শেষ হবে ২০ ডিসম্বের মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।”
সোমবার রাত থেকে বাইরের ব্যক্তিরা আর প্রচারে থাকতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার নন এমন কোনো ব্যক্তি ১৯ ডিসেম্বর সোমবার রাত ১২টার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না।”
এর আগেই তাদের এলাকা ছাড়তে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি কোনো বহিরাগত ব্যক্তি অবস্থান করে এবং নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
নির্বাচনী এলাকায় ১৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।