রোববার বিকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে এক ঘণ্টার এই বৈঠকের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি হামিদ সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদার কুশল জিজ্ঞাসা করেন। স্মরণ করেন স্পিকার হিসেবে সংসদে দায়িত্ব পালনের সময় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তার অতীত দিনের কথা।
বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিট থেকে ৫টা ৩৫ পর্যন্ত এই আলোচনায় ১১ সদস্যের খালেদা জিয়া বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন, যার সাফল্য নিয়ে আশার কথা শোনা গেছে দুই পক্ষ থেকেই।
রাষ্ট্রপতি দরবার হলে এসেই বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে জানতে চান, তিনি কেমন আছেন। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, “আছি, মোটামুটি আছি।”
এরপর বিএনপির অন্য নেতাদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছিলেন এই দলে।
পরে নিজের চেয়ারে বসে খালেদার উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, “মঈন সাহেবতো আমার নাতিন জামাই।”
খালেদা হেসে বলেন, “তাই নাকি?”
রাষ্ট্রপতি হামিদ এ সময় তার স্পিকার থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা খালেদাকে বলেন, “আগে সংসদে থাকতেতো দেখা হত। এখন তো আমি দূরে থাকি।”
রাষ্ট্রপতি হামিদ বিএনপিনেত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন বলেও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।
তিনি জানান, বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে ফলের রস, ফিশ ফিঙ্গার, চিকেন পেটিস, চিকের স্যান্ডুইচ, কাজু বাদাম, গুঁড়ের সন্দেশ আর চা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।
বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে আলোচনা শেষে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। বঙ্গভবনের অক্টাগনালে দাঁড়িয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বিদায় জানান তিনি।
পরে সংলাপের বিষয়বস্তু জানাতে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সামনে আসেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, “আন্তরিক পরিবেশে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে।”
আর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতায় বিএনপি প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।”
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করলে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পান আব্দুল হামিদ। ২০০১ সালের বিএনপি সরকারের সময় তিনি ছিলেন বিরোধী দলীয় উপ-নেতা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে হামিদ হন জাতীয় সংসদের স্পিকার। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গভবনে আসেন।
সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন খালেদা। সে সময় নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে সরকারকে সংলাপে বসাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন তিনি।
ওই নির্বাচনে বর্জন করে বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের শুরুতে দেশের অন্যতম বড় এ দলটিকেই বেছে নেন রাষ্ট্রপতি।