কারও ‘ফেভার’ চাই না: আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নিজস্ব প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2016, 11:48 AM
Updated : 15 Dec 2016, 11:50 AM

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ইসি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের ভোটে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা প্রকাশ করার প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানান তিনি।

আইভী বলেন, “যেন একদম সুষ্ঠু নির্বাচন (হয়)। কোনো পোলিং এজেন্ট নিয়ে যে শঙ্কা উনি (বিএনপি প্রার্থী) প্রকাশ করলেন, সেটা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমি কারও কোনো ফেভার নিয়ে নির্বাচন করতে চাই না।”

নারায়ণগঞ্জের সদ‌্য বিদায়ী এই মেয়র সেনা মোতায়েন নিয়ে বিএনপি প্রার্থীর দাবির বিষয়েও কথা বলেন।

“নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে কোনো বাহিনীর যদি আপনাদের প্রয়োজন হয়, আপনারা মোতায়েন করবেন, আপনাদের কাছে আমি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি।”

২০১১ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আইভী বলেন, “গত নির্বাচনে আমিও আপনার মতো শঙ্কায় ছিলাম। সরকারদলীয় হয়েও আমি নাগরিক কমিটির প্রার্থী ছিলাম, সে সময় সরকার একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল।

“নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে পাল্টে গিয়েছিল। সরকার যাকে সমর্থন দিচ্ছিল, সেখানেও কোনো কমপ্রোমাইজ করা হয়নি। গতবারের নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্ট ছিল না। কিন্তু পাবলিক যে ভোটটা দিয়েছিল প্রিজাইডিং অফিসার গণনা করে সেটার আমার ভোট হিসাবে যোগ করেছিলেন।”

গতবারের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন সেবার বিজয়ী আইভী।

“আমি যদিও সরকারি দলের প্রার্থী, আমার প্রতীক নৌকা, বিগত ৫ বছর আমি কাজ করেছি প্রতিকূল পরিবেশে। এখানে যারা উপস্থিত আছেন সবাই জানেন, কী ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে আমাকে কাজ করতে হয়েছে। এখনও প্রতিকূলতা পার হতে হচ্ছে।”

“আপনাদের বলবো, আপনারা এমন একটা নির্বাচন উপহার দেন, যাতে সরকার কোনো বিতর্কিত না হয়,” ইসির উদ্দেশে বলেন ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী।

নির্বিঘ্ন ভোট নিয়ে শঙ্কায় থাকা বিএনপি প্রার্থীকে উদ্দেশ করে আইভী বলেন, “যে শঙ্কার কথা সাখাওয়াত ভাই বলেছেন, আমি কি এমন মানুষ? আমার কি কোনো বাহিনী আছে? আমি কি কোনো সন্ত্রাসী লালন করি? আমি কি আপনাদের কারও গায়ে হাত দিতে পারি?”

মতবিনিময় সভায় আসার সময় বিএনপি নেতা আমিনুল এবং গণসংযোগকালে আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে সৌহার্দ্য বিনিময়ের কথাও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র।

“নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ। আমি আহ্বান জানাব সাখাওয়াত ভাইকে, আসুন আমরা এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভোট চাই। জনগণ যাকে ভোট দিবে সেটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।”

সাখাওয়াতকে উদ্দেশ করে আইভী বলেন, “এখানে নির্বাচন হচ্ছে মূলত আমি এবং আপনার মধ্যে। আপনিও সহিংসতার আশ্রয় নেন না, আমিও কোনো সহিংসতার আশ্রয় নিই না, আমার কোনো বাহিনীও নাই। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ এখানে যেন কোনো ধরনের কারসাজি করতে না পারে, সেজন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, সেটা যেন ভালো করে দেখা হয়।”

কালোটাকার প্রভাব ঠেকাতে ২৭টি ওয়ার্ডের ২৭টি মোবাইল কোর্ট টিমকে রাতের বেলায়ও সক্রিয় রাখার দাবি জানান আইভী।

“আমার কোনো টাকা-পয়সা চাই নাই, আমি দলের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের কারও কাছে এখন পর্যন্ত টাকা চাই নাই। কালো টাকার ছড়াছড়ি হোক সেটা আমি চাই না। রাত্রে কালোটাকার ছড়াছড়ি কাউন্সিলের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ১৯, ২০, ২১ তারিখ রাতেও যেন মোবাইল কোর্ট টিম সক্রিয় থাকে।”

জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মইনুল হক, বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়নের প্রধান শামীম ইফতেখার, র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক কামরুল আহসানসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ৭ মেয়র প্রার্থী বক্তব্য দেন।