আমি থাকতে থাকতে নতুন নেতা নির্বাচন করুন: শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা নিজের জীবদ্দশায় নতুন নেতৃত্বের হাতে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বললেও কাউন্সিলররা তাকেই দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন।  

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 10:13 AM
Updated : 23 Oct 2016, 10:18 AM

রোববার ক্ষমতাসীন এ দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাউন্সিলরা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দেখার আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন।

তাদের বক্তব‌্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার উপদেষ্টা হিসেবে জয় ‘সবচেয়ে নিরাপদ জায়গাতেই’ রয়েছেন।

শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধনের পর রোববার সকালে দলীয় সভাপতির বক্তব‌্যের মধ‌্যে দিয়ে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। দুপুরে কাউন্সিলে যোগ দেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

কাউন্সিলের এই অধিবেশনেই আগামী তিন বছরের জন‌্য নতুন নেতৃত্ব বেছে নেবেন আওয়ামী লীগের ৭২টি সাংগঠনিক জেলা থেকে আসা কাউন্সিলররা।  

শেখ হাসিনা তার প্রারম্ভিক বক্তব‌্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি চাই যে আমি জীবিত থাকতে থাকতে নতুন ভাবে নেতা নির্বাচিত করে এই সংগঠনকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করবেন।

“৩৫ বছর এই দলের সভাপতি। এত লম্বা সময় কেউ কখনো থাকেনি।”

এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত কাউন্সিলররা দাঁড়িয়ে সমস্বরে ‘না, না’ বলে ওঠেন। তারা শেখ হাসিনার নামে স্লোগানও দেন।

শেখ হাসিনা এ সময় সবাইকে বসার ইংগিত দেন এবং বলেন, “এখনই নির্বাচন হচ্ছে না। ওটা পরে বলেন। কিন্তু এটা করতে হবে। আমার বয়স ৭০ বছর হয়ে গেছে। এটাও মনে রাখতে হবে।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন তিনি।

এরপর গত ৩৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধু বড় মেয়ে বলেন, “এই আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। আওয়ামী লীগই আমার আপনজন। আওয়ামী লীগকে আমি সবচেয়ে বেশি সময় দেই। আমি নিজের ছেলে-মেয়েকেও এত সময় দেইনি।... আমার বাচ্চাদের আমি স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছি। আপনাদের বেশি সময় দিয়েছি।”

এগিয়ে যাওয়ার জন‌্য ‘নতুনভাবে নেতা নির্বাচিত করার’ তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি যেখানে যেভাবে থাকি আওয়ামী লীগ থেকে তো বাইরে থাকব না। আছি আওয়ামী লীগই তো থাকব। কিন্তু আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে।”

দলীয় সভাপতির বক্তব‌্যের পর কাউন্সিলররা একে একে মঞ্চে এসে বক্তব‌্য দিতে থাকেন।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, “জয়কে নেতৃত্বের আসনে বসাতে হবে। নেত্রী আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।”

পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, “আমরা জয়কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চাই। আপনি যে কমিটি করবেন, তার ওপর পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা আর কোনো মীরজাফর দেখতে চাই না।”

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, “আওয়ামী লীগে প্রশিক্ষিত নেতা-কর্মীর বড় অভাব আছে। প্রশিক্ষণ শিবির করা উচিত। প্রত্যেক সভা সমাবেশে জাতীয় সংগীত বাজানোর নির্দেশ দেন। আপনি যত দিন বেঁচে থাকবেন আমাদের সাথে থাকবেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয়কে নেতৃত্বে আনবেন।”

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, “আমাদের মাঝে আছেন আমাদের নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত রাজনীতি তাকে দিয়েই হবে। জয় ভবিষ্যতে আপনার পাশে থাকবে।”

মাদারীপুরের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, “আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে থাকবেন।”

গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, “সজীব ওয়াজেদ জয়কে অবশ্যই তার যোগ্যতা মত একটি পদ দেবেন। আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ। অতীতে অনেকে অনেককে সাইজ করেছেন। নৌকা ছাড়া নির্বাচন করে দেখেন, জামানত থাকে কিনা।”

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সাধারণ সম্পাদক কে হন, সেটা আপনি নির্ধারণ করবেন। জয়কে আমরা চাই।”

গঠনতন্ত্র সংশোধন শেখ হাসিনাকে আজীবন সভাপতি করার প্রস্তাব দেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি জয়কে একটি ‘নিরাপদ পদ’ দিতে বলেন।

শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, “জয় সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় আছে। আমার অ্যাডভাইজার।”

প্রারম্ভিক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা তার নিজের এবং বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানার ছেলেমেয়েদের কথা তুলে ধরে বলেন, “আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিখিয়েছি। আমি, রেহানা- আমাদের পাঁচটা ছেলেমেয়ে; আমরা তাদের একটা কথা বলেছি, তোমাদের একটা সম্পদের পিছনে ছুটতে হবে, সেটা হল শিক্ষা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ছেলে-মেয়েরা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে, পড়ালেখার মধ‌্যে চাকরিও করেছে। অনেকের সহযোগিতাও তারা পেয়েছে।

“আরেকটা কথা ওদের বলেছি- তোমরা বঙ্গবন্ধুর নাতি। তোমাদের নিয়ে কখনো কোনোদিন কেউ যেন কিছু বলতে না পারে।... তাদের নিয়ে কখনো কিছু শুনতে হয়নি। তারা দেশের কাজ করছে।”

তিন দফা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও তার পরিবার দুর্নীতি করে ভাগ্য গড়ার চেষ্টা করেননি।

ছেলেমেয়েরা বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করতে পারায় নিজের স্বস্তির কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা বিষয় আমি নিশ্চিত, তাদের জন্য ধন সম্পদ রেখে যেতে হবে না। তাদের যে বিদ্যা আছে তারা কিছু করে খেতে পারবে।”